পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আন্তরিকতায় সহজ ও স্পষ্ট, আত্মবিশ্বাস দ্বিধাসংশয়হীন অ-টলমল, জিদ সহিষ্ণু। এত অল্প সময়ের মধ্যে রম্ভার সম্বন্ধে এতবড় ব্যাপক একটা আন্দাজ করা কৃষ্ণেন্দুর পক্ষে অবশ্য মমতার জন্যই সম্ভব হয়েছে। মমতার বিরোধিতা, আন্তরিকতা, আত্মবিশ্বাস আর একগুয়েমির স্বরূপ তার জানা ছিল বলে । যা বলার ছিল প্ৰাণ ভরে বলে নিয়ে খানিক অপেক্ষা করে রম্ভ বলে, ‘কথা কন না যে ? কীই বা বলবেন, বলার কিছু থাকলে তো !” কৃষ্ণেন্দু তখন আত্মসমর্পণ করে কৈফিয়ৎ জানায়, বলে,"আমার দোষ নেই রম্ভ, আমি কিছু করি নি। রামপালের কথা আমি কিছুই লিখিনি টেলিগ্রামে। এসব কিছু জানলে তো লিখবো ? আমি শুধু কবে আসব জানিয়েছিলাম । দুঃখ করে না, আমি রামপালের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা কইব ।” , “ক’ন না কথা । সে তো বসেই আছে। ওঘরে । ডাকব ?” রামপালকে না ডাকিয়ে কৃষ্ণেন্দু নিজেই বীরেশ্বরের ঘরে গেল। বীরেশ্বরের সঙ্গেও আলাপ করবে ! মাঝখানে বহুদিন কেটে গেলেও এই স্বাধীনচেতা এবং চাষীর পক্ষে আশ্চৰ্য্য রকম সংস্কার-মুক্ত খাপছাড়া লোকটিকে সে Vefri fa | পরিচয় হবার পর প্রথমে ভেবেছিল ঝুমুরিয়ায় একটি কেন্দ্ৰ স্থাপন করে বীরেশ্বরকে ভার দেবে। বীরেশ্বরের মেজাজ আন্দাজ করার পর কৃষ্ণেন্দুর ভরসা হয় নি। আত্মকেন্দ্ৰিক আদর্শবাদী লোক দিয়েও কাজ চলে কিন্তু তীব্র অভিমানের তাপে এত বেশী মাথা গরম হলে বিপদ হয়। বীরেশ্বরকে কৃষ্ণেন্দু কাজে লাগাতে পারেনি, কিন্তু ভুলতেও পারেনি তাকে। কৃষ্ণেন্দু আলাপ করতে জানে চমৎকার। অচেনা লোকের সঙ্গে অল্প সময়ে সে ভাবি জমাতে পারে। নানা আবেষ্টনীর নানা ধাচের মানুষের বিচিত্ৰ মন ও আচরণের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবার অভিজ্ঞতায় তার অকারণ সমালোচনার আদিম প্ৰবৃত্তি এত বেশী চাপা পড়ে গিয়েছে যে তার কথা ও ব্যবহার মানুষের মধ্যে অমিল বা বিরোধিতার অনুভূতি জাগায় না। অসহায় অসুস্থ জরাজীর্ণ ও দুর্বল হৃদয় মনের অসংখ্য বিকার আর ছদ্মবেশ প্রথম বয়সে মানুষ জাতটার উপরে কৃষ্ণেন্দুর অশ্রদ্ধা জন্মিয়ে দিয়েছিল। O