পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী অকৃপণ মাটি। বর্ষার প্রথম জলধারা মাটিকে নরম করে দিলে তবে এ মাটিতে লাঙ্গলের ফল বসে, বর্ষায় সরস হলে তবে মাটিতে বীজ বেঁচে থাকে, অকুরিত হয় ; তারপরেও বর্ষার কৃপাতেই অন্ধুর বড় হয়ে ফসল ফলায়। কতবার বর্ষার খেয়ালে মানুষকে মাঠে বীজ ছড়াতে হয়েছে দুবার তিনবার-আধহাত উচু চারা, ফসল ধরবার আগের চারা, কতবার ঝলসে পুড়ে গেছে। বর্ষার খেয়াল খানিকটা বনের বৃষ্টি সামলে নেয়-কিন্তু বন দিন দিন ছোট হচ্ছে, আগের মতো আর তার ক্ষমতা নেই। বনের গা ঘোষা আর বনের ভিতরের জমি শুধু বনের ག་སྣ་ স্নেহ आ७९3 °iशू । এবার খড়পাকে বর্ষা ফেলেছে বিপদে । অসময়ে একটু দেখা দিয়েই কোথায় কোন দেশে যে চলে গেল এবারের বর্ষা, সময় পার হয়ে আবার অসময় হল, তবু তার দেখা নেই। এবার আসুক বৰ্ষা । আজি না আসে, কাল আসুক। শেষ বেলায় একপ্ৰান্ত ধূসর করে বিদ্যুতের চমক দিতে দিতে বাতাসের বল্পা ধরে মহাসমারোহে আকাশ ছেয়ে আসুক। ওগো মা কুণ্ডেশ্বরী-আসুক। নইলে যে বড় বিপদ হবে গো মা । একদিন একরাত উপোসী থেকে তোমায় পাচ পয়সার ভোগ দেব মা-আসুক । গরু মহিষ নিয়ে গোবর্ধন বাড়ী ফিরছিল। ছেলেটা মহিষের পিঠে চেপে বসেছে। গোবর্ধনের দুটি মহিষের রঙ বাদামী ধাঁচের, অর্জনের মহিষগুলির মতো নিকষ। কালো নয়। হাড়পাজরা সব গোনা যায় তার দুটি মহিষের, পিঠের উচু হাড়টার ওপর বসে ছেলেটা কি আরাম ভোগ করছে কে জানে ! তিনটি গরু। আর বলদ দুটিও তার কঙ্কালসার, তবু জমকালো চেহারার জন্য মহিষ দুটির শীর্ণতা বেশি চোখে পড়ে। কি প্ৰকাণ্ড পালন তার ও ই দুবাবা’র, দুদিন ভালো করে খাওয়াতে পারলে কি দুধটাই ও দেয়। খেয়ে যেন ও নিজের দেহ পুষ্ট করে না, দুধে পরিণত করে তার জন্য পালান ফুলিয়ে রাখে। তার ছেলেকে পিঠে নিয়ে ধীরে মন্থরগতিতে দুব বাকে গায়ের দিকে চলতে দেখে এক সময় গোবধানের বুক বা মন কোথায় যেন বেশ জ্বালা করে । মনটা গোবধানের ভালো ছিল না। চােখে জল আসবে টের পেয়ে জোর গলা খাকরি দিয়ে সে গরু মহিষকে তাড়া দেয়-টিকাস, টকস, হেই-ই! চং, চ্চঃ। . রাস্তার ধারে তৃণহীন শক্ত মাঠ। প্ৰতি পদক্ষেপে যেন ফিরে আঘাত করে। রাস্তায় উঠে গোবধান একটু আশ্চর্য হয়ে গেল। 3Ե8