পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাস বিকালে বাসের প্রতীক্ষায় পথপ্ৰান্তের খড়পা যেমন চঞ্চল হয়ে থাকে, এখনো তেমনি চঞ্চল হয়ে আছে। চঞ্চল এবং উদগ্রীব হয়ে আছে। “কি ব্যাপার গ ?” “বাস এসে নি ।” 'gcन नि ? ञा ?' “উহুক। সদরে না গেলি মোর চলবে নি। কিনা, শালার বাস তাই আজি এসবে নি তো মোকে লিয়ে যেতে |’ পুটলি হাতে শ্ৰীধন পাল অনেকক্ষণ হল অস্থির হয়ে এদিক ওদিক চলা-ফেরা করছে। পুব দিকে যতদূর রাস্তা দেখা যায় তাকিয়ে থাকছে, জগতের চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চিটায় ধাপ করে বসে বিড়ি ধরাচ্ছে এবং কয়েক মিনিট পরেই আবার উঠে অস্থির হচ্ছে। কাল তার মস্ত মোকদ্দমা আছে সদরে। সদ্বরে পৌছতে না পারলে তার সর্বনাশ হয়ে যাবে। দেড়শো দুশো টাকার সর্বনাশ ! গোবধানের গরুর গাড়ী ঠিক নেই, চাকা মেরামত করতে হবে। বলদ আছে। গাড়ী একটা হয়তো ভাড়া পাওয়া যেতে পারে । ‘বাস না এসে তো মোর গাড়ীতে যেও’খন। খেয়ে লিয়ে রওনা দিলে-” গোবধানের প্রস্তাবে শ্ৰীধনের মুখে ভেংচি দেখা দিল। গরুর গাড়িতে ? দুপুর রাতে বন পেরিয়ে লিয়ে যাবি তোর গরুর গাড়িতে ? রাতে কটা বাঘ রাস্তায় হাওয়া খেয়ে বেড়ায় জানিস? নটবর ঠাকুর মৃদু হেসে বলল, ‘গণ্ডা তিনেক, আর কত!’ দণ্ডধারী ডাক্তারের ভাগ্নে পাশ দিয়ে আসল খড়পার দিকে যাচ্ছিল, বলে গেল, "বাঘগুলোও হন্যে হয়ে আছে। একটা মানুষে আগে ওদের চারবেলা পেট ভরত, এখন একবেলা আধাপেটা হয়। দীনু সেদিন বাঘ দেখে কঁাপিতে কঁাপিতে পড়ে গেল, বাঘ তাকে দুচারবার শুকে গর্জন করে চলে গেল। হাড় চামড়া বাঘ খায় না। ’ পেটের কথায়, খাওয়ার কথায়, ক্ষুধার কথায় গোবধানের হঠাৎ মনে পড়ে গেছে। প্ৰকাণ্ড একটা কুমড়ো কাল সে নামিয়েছিল, গায়ের কেউ ভালো দর দেয় নি। নটবর ব্ৰাহ্মণত্বের দাবীতে কেড়ে নেবার চেষ্টা করেছিল দশ পয়সা বাকী - দামে। বাসের যাত্রীদের কারো কাছে হয়তো কুমড়োটা বেচা যেতে পারে। অবশ্য বাস যদি আসে। কেউ কি জানে না কি হয়েছে বাসের, কেন বাস এখনো আসে নি আজ ? 37