পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী বসিয়ে দেবার বদলে না খেয়ে থেকে গুণমতীকে শাস্তি দেবার কল্পনায় সে বিশেষ কোনো তফাৎ খুঁজে পায় না। তাছাড়া তার অভিজ্ঞতা আছে। চড়াচাপড়ের চেয়ে শেষের শাস্তিটাই জোরালো হয়। চড় মারলে গুণমতী শুধু কঁাদে, রাগ করে উপোস দিলে মাথা কপাল খুড়তে আরম্ভ করে ! গোবর্ধন ভাবে, জগতের কাছে দুপিয়সার চা খেয়ে চাঙা হওয়া যাক। ছ। সাত মাস আগে কারা যেন এসে চায়ের আশ্চৰ্য গুণের কথা তাদের জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। তারপর দু'একবার খিদের সময়— মাঠে খাটবার সময় যে খিদে শরীর ভেঙ্গে আনে আর মাথা বিম ঝিম করায়-মুড়ি চিড়ার বদলে কঁচের\গ্ৰাসে b খেয়ে দেখেছে। মন্ত্রবলে যেন খিদে মরে যায়, সারা দেহ চাঙা হয়ে ওঠে। \ কেবল একটা আক্ষেপ থেকে যায়-তৃষ্ণার। মনে হয়, সমস্ত শরীর, সমস্ত শরীরের ভেতরটা যেন হাত-পা আছড়ে মুছা যাচ্ছে! আধা ঘটি জল খেয়ে একটু বিশ্রাম করলেই সেটা সেরে যায়। অনেকক্ষণ খিদে পায় না, সর্বনেশে খিদে ৷ জগতকে গোবর্ধন দুধ জোগায়, দেনা-পাওনার হিসেব আছে। চাইতেই চা পাওয়া গেল, আর এক পয়সার ছোলাভাজা । একদিকে কঁচবসানো টিনের পাত্রে নোনতা মিষ্টি বিস্কুটগুলি চিরদিন গোবর্ধনকে আকর্ষণ করে। কিন্তু বিস্কুট তার কপালে জোটে না । কয়েকবার একখানা করে কিনেছিল, খেতে পারেনি। নানু রোজ বিস্কুটের পয়সার জন্য বায়না ধরে, কঁাদে। নিজের জন্য বিস্কুট কিনে কোণা ভেঙ্গে একটু শুধু স্বাদ গ্ৰহণ করে নানুর জন্য তুলে রাখতে গোবর্ধন কোনোদিন এতটুকু মজা পায় না, তবু তার কেনা বিস্কুট শেষ পর্যন্ত নানুর পেটেই যায়। তার একগাল হাসি আর ভাবভঙ্গির খুশি খুশি ভাবটা জগৎ-সংসারের ওপর -গোবর্ধনকে চটিয়ে দেয়। একবার সে দুখানা বিস্কুট কিনেছিল একসঙ্গে, ভাগ্যকে পরাস্ত করবে বলে। কিন্তু হায়রে কপাল গোবর্ধনের, বিস্কুট সম্পর্কে যার কথা কোনো দিন তার মনে আসেনি, সেদিন তারই কথা স্পষ্ট মনে পড়ে গেলা-গুণমতী বােধ হয় জীবনে কখনো বিস্কুটের স্বাদ পায়নি! কত দিক থেকে এমনি ধারা কত চাপ যে ঠেসে ধরে রেখেছে গোবর্ধনের মনকে । আজকের মতে যাতনাময় ক্ষুধায়, প্ৰতিদিনের অপরিতৃপ্ত ক্ষুধায়, সেই চাপগুলি সে স্পষ্ট অনুভব করে । বহুক্ষণ নিঃসঙ্গ থাকলে তার যখন বিম ধরে - যায় তখন মনে হয়, পায়ের তলার শক্ত মাটি ছেড়ে খানিকটা উপরে উঠে সে যেন নিয়ালম্ব হয়ে ঝুলছে, দড়াম করে পড়ল বলে। । 8)R