পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আঘাতের প্রতিক্রিয়া ? দুটি মানুষের প্রেম হয়েছে জানাটা তো এমন কিছু অঘটন নয় যে হঠাৎ আবিষ্কার করেছে বলেই এমন ভাবে নাড়া লাগবে ? এ রহস্য কোনদিনই কৃষ্ণেন্দুর সম্পূর্ণরূপে বোধগম্য হয় নি। খুটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে ব্যাপারটা বুঝবার চেষ্টা করার মত সময়ও তার ছিল না। আগে মনোবিজ্ঞান অধ্যয়ন ও আয়ত্ত না করে ওরকম বিচার বিশ্লেষণ বিশেষ কাজেও লগত না। অন্ততঃ নিজেকে সন্তুষ্ট করার মত করে নিজস্ব রহস্য ভেদ করার তাগিদটা কৃষ্ণেন্দুর মধ্যে চিরদিনই জোরালো। অবসর মত ভেবেচিন্তে পরে কয়েকটি যোগাযোগ খুজে বার করে সে বুঝেছিল যে খাপছাড়া অনৈসৰ্গিক কিছু ঘটেনি। হীরেন ও মমতার প্ৰেম নিয়ে সে খানিককটা উদ্বিগ্ন হয়েছিল । অনাত্মীয়, সদ্য পরিচিত রামপালের হয়ে রম্ভার হৃদয়গ্ৰাহী সতেজ কলহ তার মনে একটা রহস্য সৃষ্টি করেছিল। দু’জনের ভালবাসা হয়েছে জানামাত্র সে রহস্য গিয়েছিল ফেটে । কেবল তাই নয়, তার স্মরণ আছে, দুজনের মুখের ভাব ও দৃষ্টিবিনিময় দেখে সে অনুভব করেছিল যে একটা কল্পনাতীতরূপে নাটকীয় ব্যাপার ঘটেছে । দেহ-মন-প্ৰাণ দিয়ে এমন প্ৰচণ্ড উন্মাদনার সঙ্গে ওরা দু’জন পরস্পরকে কামনা করেছে যা তার কাছে অবিশ্বাস্য, অসম্ভব । একজন মনোবৈজ্ঞানিক ডাক্তার বন্ধু আছে কৃষ্ণেন্দুর । নাম মৃন্ময় সরকার। কথা প্রসঙ্গে একদিন কৌতুহলের বশে কৃষ্ণেন্দু তাকে তার এই অভিজ্ঞতার বিবরণ জানালি । বন্ধু হেসে বলল, “তোমার আন্দাজটা মিথ্যে নয়, তবে গৌণ। আসল কারণ ভিন্ন ।” “কি কারণ ?” ‘তুমি একজন যোয়ান মন্দ পুরুষ এবং এককালে ঘোরতর রোমান্টিক ছিলে, এই কারণ । কাজের নেশায় আত্মভোলা হয়ে থাক। কিনা, তাই আচমকা সহানুভূতির ঝনঝনানিতে মাথা ঘুরে গিয়েছিল। অভ্যাস তো নেই।” ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে কৃষ্ণেন্দুর একটা সাম্প্রতিক অস্পষ্ট ধারণা সমর্থন পেয়েছিল। সমস্ত স্বীকৃত সত্যগুলিকে নতুন দৃষ্টি বিচার করার, যাচাই কষে নেবার দিন এসেছে। দার্শনিকের দৃষ্টিতে নয়, বৈজ্ঞানিকের । মনকে, আত্মাকে নিছক মস্তিষ্কের ক্রিয়া বলে মানতে হলে পৃথিবীর অধিকাংশ Q.R