পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলুদ পোড়া সে বছর কাতিক মাসের মাঝামাঝি তিন দিন আগে পরে গায়ে দু'দুটাে খুন হয়ে গেল। একজন মাঝ বয়সী যোয়ান মন্দ পুরুষ এবং ষোল সতের বছরের একটি রোগা ভীরু মেয়ে । গায়ের দক্ষিণে ঘোষেদের মজা পুকুরের ধারে একটা মরা গজারি গাছ বহুকাল থেকে দাড়িয়ে আছে। স্থানটি ফাকা, বনজঙ্গলের আবরু নেই। কাছাকাছি শুধু কয়েকটা কলাগাছ। ওই গজারি গাছটার নীচে একদিন বলাই চক্রবর্তীকে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেল। মাথাটা আটচির হয়ে ফেটে গেছে, খুব সম্ভব অনেকগুলি লাঠির আঘাতে । চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল বটে। কিন্তু লোকে বিস্মিত হল না। বলাই চক্ৰবতীর এই রকম অপমৃত্যুই আশেপাশের দশটা গায়ের লোক প্রত্যাশা করেছিল, অনেকে কামনাও করছিল। অন্যপক্ষে শুভ্ৰ মেয়েটির খুন হওয়া নিয়ে হৈ চৈ হল কম কিন্তু মানুষের বিস্ময় ও কৌতুহলের সীমা রইল না। গোরস্ত ঘরের সাধারণ ঘরোয়া মেয়ে, গায়ের লোকের চোখের সামনে আর দশটি মেয়ের মত বড় হয়েছে, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ী গেছে এবং মাসখানেক আগে যথারীতি বাপের বাড়ী ফিরে এসেছে ছেলে বিয়োবার জন্য। পাশের বাড়ীর মেয়েরা পর্যন্ত কোনদিন কল্পনা করার ছুতো পায়নি যে মেয়েটার জীবনে খাপছাড়া কিছু লুকানো ছিল, এমন ভয়াবহ পরিণামের নাটকীয় উপাদান সঞ্চিত হয়েছিল ! গায়ে সব শেষের সঁঝের বাতিটি বোধ হয় যখন সবে জ্বালা হয়েছে তখন বাড়ীর পিছনে ডোবার ঘাটে শুভ্রার মত মেয়েকে কে বা কারা যে কেন গলা টিপে মেরে রেখে যাবে ভেবে উঠতে না পেরে গা শুদ্ধ লোক যেন অপ্ৰস্তুত হয়ে রইল । বছর দেড়েক মেয়েটা শ্বশুর বাড়ী ছিল, গায়ের লোকের চোখের আড়ালে । সেখানে কি এই ভয়ানক অঘটনের ভূমিকা গড়ে উঠেছিল ? দুটা খুনের মধ্যে কি কোন যোগাযোগ আছে ? বিশ ত্রিশ বছরের মধ্যে গায়ের কেউ তেমন ভাবে জখম পৰ্যন্ত হয়নি, যখন হল পর পর একেবারে খুন হয়ে গেল দুটাে ! তার একটি পুরুষ, অপরটি যুবতী নারী। দুটি খুনের মধ্যে সম্পর্ক Ο Σ\O ૭૭()