পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলুদ পোড়া কটমট করে তাকিয়ে ধীরেন। ধমক দিয়ে বলল, “চুপ । যা খুশী মনে হােক তোমার, আমায় কিছু বলবে না। খপর্দার।” স্কুলে যাওয়ার পথে যাদের সঙ্গে দেখা হল মুখে তারা কিছু বলল না। কিন্তু তাদের তােকানোর ভঙ্গি যেন আরও স্পষ্ট জিজ্ঞাসা হয়ে উঠল ; কথাটা তুমি কি ভাবে নিয়েছ। শুনি ? পুরুতষ্ঠাকুর তাকে অনেকক্ষণ দাড় করিয়ে রেখে দোষমোচনের জন্য দরকারী ক্রিয়াকর্মের বিষয় আলোচনা করলেন, উপদেশ দিলেন, বিশেষ করে বলে দিলেন যে স্কুল থেকে ফিরবার সময় বাড়ী থেকে সে যেন তার নিজের ও বাড়ীর সকলের ধারণের জন্য মাদুলী নিয়ে যায়। স্কুলে পা দেওয়ার পর থেকে ধীরেনের মনে হতে লাগল, সে যেন বাইরের কোন বিশিষ্ট অভ্যাগত স্কুল পরিদর্শন করতে এসেছে, তার সাত বছরের অভ্যস্ত অস্তিত্বকে আজ এক মুহূর্তের জন্য কেউ ভুলতে পারছে না । প্ৰথম ঘণ্টাতেই ক্লাশ ছিল। অৰ্দ্ধেক ছেলে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে, বাকী অৰ্দ্ধেক নিজেদের মধ্যে গুজগাজ ফিসফিস করছে। নিজেকে জীবন্ত ব্যঙ্গের মত মনে হচ্ছিল। বইয়ের পাতায় চোখ রেখে ধীরেন। পড়াতে লাগল। চোখ তুলে ছেলেদের দিকে তাকাতে পারল না । ঘণ্টা কাবার হতেই হেডমাষ্টার ডেকে পাঠালেন। “তুমি একমাসের ছুটি নাও ধীরেন।” “এক মাসের ছুটি ? “মথরবাবু এইমাত্র বলে গেলেন। আজ থেকেই ছুটি পাবে, আজ আর তোমার পড়িয়ে কাজ নেই।” মথুরবাবু স্কুলের সেক্রেটারী। মাইল খানেক পথ হাঁটলেই তার বাড়ী পাওয়া যায়। চলতে চলতে মাঝপথে ধীরেনের মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল। কদিন থেকে হঠাৎ চেতনায় ঝাকি লেগে মাথাটা তার এই রকম ঘুরে উঠেছে। চিন্তা ও অনুভূতির আকস্মিক পরিবর্তনের সঙ্গে এই ঝাঁকি লাগে! অথবা এমনি ঝাঁকি লেগে তার চিন্তা ও অনুভূতি বদলে যায়। গাছতলায় কিছুক্ষণ বিশ্ৰাম করে সে বাড়ীর দিকে পা বাড়ােল। মথুরবাবু এখন হয়তো খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম করছেন, এখন তাকে বিরক্ত করা উচিত হবে না। * স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, একমাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে মথুরবাবুর সঙ্গে দেখা করার অনেক সময় সে পাবে। আজ গিয়ে হাতে পায়ে না। ( )