পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলুদ পোড়া “ভূত নয়, পেত্নী। ব্যাটাছেলে ভূত হয়।” ঘরের মধ্যেও কারণে অকারণে শান্তি ভয় পেয়ে আঁতকে ওঠে । কাল প্ৰথম রাত্রে একটা প্যাচার ডাক শুনে ধীরেনকে আঁকড়ে ধরে গোঙাতে গোঙাতে বমি করে ফেলেছিল । বড় ঘরের দাওয়ার পূব প্ৰান্তে বসে তামাক টানতে টানতে দিনের আলো মান হয়ে এল। এখানে বসে ডোবার ঘাট আর দু’ধারের বঁাশ ঝাড় ও জঙ্গল দেখা যায়। জঙ্গলের পর সেনেদের কলাবাগান । সেনেদের কাছারি-ঘরের পাশ দিয়ে দূরে বোসেদের মজা পুকুরের তীরে মরা গজারি গাছটার ডগা চোখে পড়ে। অন্ধকার হবার আগেই কুয়াসায় প্ৰথমে গাছটা তারপর সেনেদের বাড়ী আবছা হয়ে ঢাকা পড়ে গেল । “তুমি কি আর ঘাটের দিকে যাবে?” শান্তি জিজ্ঞেস করল । ' ' “তবে বঁাশটা পেতে দাও ।” বঁাশ পাততে হবে না ।” শান্তি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে দাড়িয়ে রইল। “তোমার চোখ লাল হয়েছে। টকটকে লাল।” ‘হোক ৷” শোবার ঘর আর রান্নাঘরের ভিটের সঙ্গে দু'টি প্ৰান্ত ঠেকিয়ে শান্তি নিজেই বঁাশটা পেতে দিল। কঁচা বাঁশের দু'প্রান্তের খানিকটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অশরীরী কোন কিছু এ বঁাশ ডিঙ্গোতে পারবে না। ঘাট থেকে শুভ্ৰা যদি বাড়ির উঠানে আসতে চায়, এই বঁাশ পর্যন্ত এসে ঠেকে যাবে। আলো জালার আগেই ছেলেমেয়েদের খাওয়া শেষ হল। সন্ধ্যাদীপ না জেলে শান্তির নিজের খাওয়ার উপায় নেই, ভাল করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে তাড়াতাড়ি দ্বীপ জেলে ঘরে ঘরে দেখিয়ে শাখে ফু দিল। দশ মিনিটের মধ্যে নিজে খেয়ে ধীরেনের ভাত বেড়ে ঢাকা দিয়ে রেখে, রান্নাঘরে তালা দিয়ে, কাপড় ছেড়ে ঘরে গিয়ে ঢুকল। বিকালে আজ-কাল সে মাছ রান্না করে না, এটােৰ্কাটা নাকি অশরীরী আত্মাকে আকর্ষণ করে। খাওয়ার হাঙ্গামা খুব সংক্ষেপে, সহজে এবং অল্প সময়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। “ঘরে আসবে না ? GtR Y