পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী করবে, বাড়ীতে থাকতে দেবার দরকার। মনে কষ্ট দেবার জন্যে কেউ কাউকে ইচ্ছে করে বাড়ীতে রাখে নাকি ?” সুকোমল হতভম্বর মত বলল, “রাখে না ?” রমেন বলল, “কেন রাখবো? একজনকে কষ্ট দিলে নিজেরওঁ কষ্ট হয়, মিছামিছি নিজে কষ্ট পাবে এমন বোকা কেউ নয়। ভাই। আমরা জোর করে থাকতে আসতাম। তাহলে বরং কথা ছিল। তা তো আমরা আসিনি। আমার কথা ধরে । বাবা পিসেমশাইকে লিখলেন। আমি এখানে থাকতে পারব কি না, পিসেমশাই জবাবে আমাকে পাঠিয়ে দিতে লিখলেন। লিখলেন, কোন অসুবিধে নেই। অনাদর করবার জন্যে আমাকে ডেকে আনার তার কি দরকার ছিল ? বাবাকে তাহলে লিখে দিতেন। সুবিধে হবে না ।” কথা বলতে বলতে রমেন টেবিলে ছড়ানো বইগুলি গুছিয়ে ফেলেছে। বইখাতা সমস্ত টেবিল জুড়ে ছিল, এখন দেখা গেল টেবিলে অনেক জায়গা। তাকের জঞ্জালগুলি সরিয়ে, নামিয়ে, সাজিয়ে গুছিয়ে জায়গা খালি করতে করতে রমেন হঠাৎ বলল, “তুমি ওপরের ঘরে থাকবে ভাই ? আমি ব্যবস্থা করে দেব।” রমেন ব্যবস্থা করে দেবে! সেই যেন বড়ীর কর্তা । সুকোমল চটে গিয়ে একটা ব্যঙ্গোক্তি করতে যাচ্ছিল, হঠাৎ তার মনে হল রমেন বাহাদুরী করে নি, ওপরে তার থাকবার ব্যবস্থা করার ক্ষমতায় নিজের বিশ্বাসটা শুধু প্ৰকাশ করছে। “আমার দরকার নেই। -সুকোমল জবাব দিল । এগারটা পৰ্যন্ত নীচের তলায় কোন রকম গোলমাল ছিল না, তারপর এমন হৈ চৈ হট্টগোল শুরু হয়ে গেল যেন হাট বসেছে। সুকোমল বলল, “বড় মামা ওপরে গেলেন ।” এ বাড়ীতে দিবাকর বাবুর প্রচণ্ড শাসন কেবল তার নিজস্ব সুখস্তুবিধা আর জালাতন হওয়া না-হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। চােখ আর কাণের আড়ালে কি ঘটছে। সে বিষয়ে তার কিছুমাত্র মাথা ব্যথা নেই, তার সামনে সবাই ভয়ে ভয়ে সন্তৰ্পণে চলাফেরা করবে, জোরে কথা বলবে না, হাসবে না, ছেলে মেয়েরা পৰ্যন্ত চেঁচামেচি দুরন্তপণা বন্ধ রাখবে—এইটুকু হলেই তিনি সন্তুষ্ট। তাই তিনি একতলায়। নামলে দোতালা হাঁফ ছেড়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠে, দোতলায় শুরু হয় চোঁচামেচি ঝগড়াৰূর্ণাট, মারামারি। বড়রা অবশ্য মারামারিটা করে না, সেটা ছেলেমেয়েদের (V9R