পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমরা সবাই ভালো মনোরমা হেসে বললেন, “এ ঘরে থাকতে চাও তুমি ? বেশ বাবা, তাই হবে। সুকোমল ধীরেনের ঘরে যাক, তুমি এখানেই থাকে।', এ ব্যবস্থায় খুশী হওয়ার বদলে সুকোমল কিন্তু ভয়ানক চটে গেল। তার আত্মসম্মানে ঘা লাগল কি না। এতদিন বাড়ীর লোকের উপেক্ষায় তার অভিমানের সীমা ছিল না, আজ তাদের পক্ষপাতিত্বে সে হিংসায় পুড়তে লাগল। তাকে কেউ গ্ৰাহও করে না, রমেনের মুখের কথায় তার দোতলায় ভাল ঘরে থাকবার ব্যবস্থা হয়ে যায় । বাড়ীতে পা দিয়েই ছেলেটার এতখানি প্ৰতিপত্তি জন্মে গেছে ? কৃতজ্ঞতা বোধ করার বদলে রমেনের বিরুদ্ধে সে তীব্র বিদ্বেষ অনুভব করতে লাগল। তার মনে হতে লাগল, উপকার করার বদলে রমেন তাকে ভীষণ অপমান করেছে। মনটা তার আরও বেশী খিচড়ে গেল, ওপরের ঘরে যেতে একান্ত অনিচ্ছা জানাতেও কেউ যখন তার কথা কানে তুলল না, ধমক দিয়ে জোর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল দোতলায়। কেবল সুকোমল নয়, অনুপমারও এমন রাগ হল বলবার নয়। একে তো প্ৰথমেই রমেনের ব্যবহারে তিনি বিরূপ হয়ে উঠেছিলেন, তার ওপর তার সম্পর্কে তার বাড়ীতে এসে মনোরমার দলে ভিড়ে তাকে যে অপমানটা সে করল তার জ্বালা চেপে রাখতে গিয়ে গায়ে জর আসার মত শিউরে শিউরে উঠতে লাগলেন । মুখে যাই বলুন, দু'দিন দেখে সত্যি সত্যি কি আর রমেনকে তিনি তাড়িয়ে দিতেন ? এখন মনে মনে তিনি প্ৰতিজ্ঞা করে বসলেন, তেরাত্রি পোয়ানোর আগে ছোড়াটাকে তিনি বিদেয় করবেন, কাণ্ড করে ছাড়বেন একটা । তাকে ডিঙ্গিয়ে তার ভাইপোকে ছোট-বৌ কিসের জোরে দখল করে তাও দেখে নেবেন। দুপুরবেলা একবার অনুপমার ঘরের সামনে দিয়ে যাবার সময় ভেতরে রমেনের সঙ্গে তাকে গল্প করতে দেখে মনোরমার চশমা-পরা চোখে জল এসে পড়বার উপক্রম হল। নিজের ঘরে গিয়ে তিনি ভাবতে লাগলেন, না, আগে রমেনকে বাড়ী থেকে তাড়ান হবে না। আগে শিক্ষা দিতে হবে ছোট-বৌকে। রমেনকে বশ করে ওকে দিয়ে অপমান করতে হবে। ডাকলে রমেন ছোট-বৌয়ের কাছে যাবে না, কথা বললে শুনবে না, অবজ্ঞা দেখাবে, অপমান করবে—এই যদি করতে পারেন, তবেই অনুপমার বেঁচে থাকা সার্থক । @\3愈