পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- তোমরা সবাই ভালো পরে থাকেন ! সত্যই কি তিনি এই রকম মানুষ ? বড় ট্রাঙ্কের তলা থেকে খুজে পেতে পুৱানে দিনের প্রাইজগুলি দেখাবার সময় রমেনের চোখভরা বিস্ময় ও শ্ৰদ্ধা দেখে তো তার মনে হচ্ছে আজও তিনি সেই আগের অনুপমার মতই আছেন, যার হাসিখুশী ভাব আর মিষ্টি স্বভাবে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেত, পাড়ার মেয়ে বৌ ভিড় করে যার কাছে আসত সেলাই শিখতে আর গান শুনতে ! অনুপমা স্পষ্ট অনুভব করতে লাগলেন ভেতরটা তার অনেক দিন শুকনো হয়ে ছিল আজ হঠাৎ একটা মধুর রসালে। আবেগে ভিজে সরস হয়ে উঠেছে। ঠিক এই রকম মনের অবস্থা ছিল বলে সন্ধ্যার পর মনোরমার ঘরে রমেনকে দেখে রাগ হবার বদলে তার খুব অভিমান হয়ে গেল। খানিক পরেই রানীকে দিয়ে তাকে নিজের ঘরে ডাকিয়ে উদাসভাবে বললেন, “আমার নিন্দে শুনতে বেশ ভাল লাগছিল, না বাবা ? আমি তো মন্দ আছিই-” 'না, পিসীমা ।” অনুপমা কাতর হয়ে বললেন, “তুমি কি জানবে, সবাই আমায় মন্দ বলে। যার জন্যে যত করি তার কাছে আমি তত মন্দ ।” রমেন হেসে ফেলল। অনুপমা যেন হাসির কথা বলেছেন এমনি ভাবে হেসে ফেলল।—‘কেউ মন্দ বলে না পিসীম। আপনি কেন মন্দ হতে যাবেন ? ভালোপিসীমা নিন্দে করেন নি, দুঃখ করছিলেন। আপনি নাকি আগে খুব ভালবাসতেন। ভালো-পিসীমাকে, এখন আর বাসেন না । শুনে আমি কি বললাম জানেন ? 'दि व्निल ?' বললাম, “তা নয় ভালো-পিসীমা, পিসীমার শরীর ভাল নেই। তাই আগের মত আদর যত্ন করতে পারেন না। সত্যি নয় ?” সত্যি নয়। আবার! আজি কতকাল ধরে কত অসুখে ভুগছেন পিসীম কে তার খবর রাখে ! কে তাকিয়ে দ্যাখে তার দিকে, তিনি মরলেই বা কার কি এসে যায় । সংসারের জন্য উদয়াস্ত তিনি খেটে যাবেন, সকলের ভাবনা ভেবে জর্জরিত হবেন, তাহলেই সবাই খুশী । কিন্তু এ ছেলেটার দয়ামায়া আছে, দেখেই বুঝতে পেরেছে তার শরীর ভাল নয়। “ছোট বৌ কি বললে ?” ‘বললেন স্বর্ণাসিন্দুর খেলে আপনার উপকার হবে। ওঁর এক মামা কবিরাজী করেন, তার কাছে খাটি ওষুধ পাওয়া যায়, আমিয়ে দেবেন বললেন।” ¢ዮ9ዓ