পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুরি চুরি খেলা দ্রষ্টব্য খুব বেশী অসাধারণ নয়, কিন্তু কমলার দেখিবার ভঙ্গিতে মনে হয় এ যেন পৃথিবীর অপূর্ব দৃশ্য। মাঠের দক্ষিণে একসারি নিষ্কম্প নারিকেল তরু, মাঠের মাঝখানে পাতা-ঝরা একটি পেয়ারা গাছ, উত্তরে আমবাগানের জমাট শ্যামলতা এবং ইহাকে বেষ্টন করিয়া আৰ্দ্ধচক্রাকার ইটবাধানো লাল পথ। পথের ধারে, ঘোষন্সাহেবের সাদ। বাড়ীর সামনে, টেলিগ্রাফ পোষ্টে হৃষ্টপুষ্ট গাভীটি বাধা রহিয়াছে। রায়বাৰুদের জমাদার কিষণ প্ৰত্যহ দুইবেল গাভীটিকে আনিয়া ওই পোষ্টে বাধিয ঘোষসাহেবের চাকরের সামনে খাটি দুধ দুহিয়া দিয়া যায়। নিকটে বাছুরটি দাড়াইয়া আছে, নিষ্কম্প, নিশ্চল,—বীভৎস। দু'মাসের বাছুরটি মানুষের সীমাহীন লোভের প্রায়শ্চিত্ত করিতে পনের দিন আগে মরিয়া গিয়াছিল, মানুষ তবু তাহাকে রেহাই দেয় নাই। চামড়া ছাড়াইয়া নিয়া ভিতরে খড় পুরিয়া কাঠের পায়ে সামনে দাড করাইয়া প্ৰতিনিয়ত গাভীটিকে প্রতারণা করিতেছে। নির্বোিধ পশু মৃত্যু বোঝে না। ক্রমাগত চাটিয়া চাটিয়া সন্তানের নিথর অঙ্গে জীবনের সাড়া আনিবার চেষ্টা করে। এতদূরে জানালায় দাড়াইয়া তাহার গভীর কালো চোখের সকাতার চাহনি কমলা যেন স্পষ্ট দেখিতে পায় । তার চোখ জ্বালা করিতে থাকে, সৰ্বাঙ্গ থর থর করিয়া কঁপিয়া ওঠে। ক্ষুব্ধ হৃদয়ে সে কিষণকে অভিশাপ দেয়, মানুষকে ঘুণা করে । তার মনে পড়ে ফুক নামক প্রক্রিয়ার কথা, গরুর দুধ বাড়ানোর যে বীভৎস উপায়ের কথা কিছুদিন আগে সে শুনিয়াছে। কমলার মনে হয় মানুষ পারে না aभन्म काञ्ज 6भग्ने । মাথা বিম-ঝিম করে কমলার । কমলা এদিকের জানালায় সরিয়া আসে । নীচে ফুলের বাগান, বাগানের শেষে ফল-বাগিচা। তাহার শেষ প্ৰান্তে বাদামী রঙের ঘর তিনখান এ বাড়ীরই পরিসীমার অন্তর্গত। গাছের ফাক দিয়া ঘর তিনখানির দিকে কমলা শূন্য দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে। V