পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুরি চুরি খেলা তার কয়েদী। তোমায় জেল দিয়েছে হাকিম, কিন্তু নিরপরাধ জেলারকে দেখে রাগে চোখ লাল করে ফেলেছ! কমলা মৃদুস্বরে বলিল, রাগে নয়। অনুরাগে ? এই পরিহাসের জবাবে কমলা নীরব হইয়া রহিল। খাটের প্রান্তে বসিয়া তার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া অনন্ত বলিল, ভূষণের অন্তৰ্দ্ধান, বসনের বিদ্রোহ! এ শাড়ী তোমার কে এনে দিয়েছে শুনি ? আমার কিন্তু খুব পছন্দ হয়েছে। এনে দিয়েছে কে ? আমি আনিয়েছি। আমি এনে দিই নি । কে এনে দিয়েছে শুনবে ? সুশীলবাবু। অনন্তের মুখ অন্ধকার হইয়া আসিল । সুশীল ? ওকে বরখাস্ত করতে হবে। মোটা একটা চুরুট ধরাইয়া অনন্ত গভীরভাবে ধূমপান করিতে লাগিল। কমলা বলিল, বরখাস্ত করতে হবে কেন ? আমার আদেশ পালন করেছে বলে ? না । আমার আদেশ পালন করেনি বলে । কমলা মান ভাবে হাসিল, ও ! তবে বরখাস্ত করতেই হবে। ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া অনন্ত বলিল সুশীলের স্পৰ্দ্ধা এত বেড়েছে। কেন জানি কমল ? ওর ছেলেকে তুমি অতিরিক্ত আদর কর বলে। কমলা উদাস ভাবে বলিল, হবে! কিন্তু এ স্পৰ্দ্ধা নয়। এতে আমি ওঁর বিনয়ের লক্ষণই খুজে পাই। কৈফিয়ৎ সৃষ্টি করছ, কেন ? দিও তুমি সুশীলবাবুকে বিদায় করে !! অনন্ত স্তব্ধ হইয়া রহিল। তাহার চুরুটের ধোঁয়া পাক খাইতে খাইতে উপরে উঠতে লাগিল ; মন্থর গতি। এদের কলহ ও এমনি অলস, এমনি সংক্ষিপ্ত, এমনি ভীরু । কেহ রাগ করে না, ধৈৰ্য হারায় না, কড়া কথা বলে না । এই যে সামান্য একটু আলোচনা হইয়া গেল। ইহা শুনিয়া বাহিরের লোকের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন যে, সুশীলকে বরখাস্ত করিতে না পারিলে অনন্ত বহুদিন (8)