পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুরি চুরি খেলা এমনি শ্ৰীহীন এমনি ভয়ানক যে পলায়নে লজ্জা ছিল না। কিন্তু দিনের পর দিন পুঞ্জীভূত সর্বনাশকে সে নীরবে স্বীকার করিয়া নিয়াছে, আত্মরক্ষার চেষ্টামাত্র করে নাই। তা যে অকারণে নয় তার চেয়ে কে তা ভাল করিয়া জানে ? এলোচুলে মুখ প্ৰায় ঢাকিয়া গিয়াছিল, কমলা তাহ সরাইবার চেষ্টা করিল না। ঘোমটার মত কালো চুল তার মুখের লজ্জা ঢাকিয়া রাখুক । চালে আগুন লাগার সুযোগে গৃহস্থের ঘরের ভিত্তিতে যে সিদ কাটিয়াছে এ ভাবেই তাহাকে লজ্জা গোপন করিতে হয়। কমলা তা জানে। অনেকদিন ধরিয়া অনেক রাত্ৰি জাগিয়া বাদামী রঙের তিনখানা ঘরে অনেক স্বপ্নের সংসার পাতিয়া এ বিষয়ে তার পুরাপুরি জ্ঞান জন্মিয়াছে। ঘরের আলো আবছা হইয়া আসার সঙ্গে সুশীল কখন শুইয়া পড়িয়াছিল। কমলা টের পায় নাই। মুখ তুলিয়া দেখিয়া তার বুকের মধ্যে কেমন করিয়া উঠিল। একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়াছে। এতক্ষণ চুপ চাপ বাপের কাছে থাকিয়া তার দুই বাহুর আবেষ্টনীতে খোকা ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। খোকা বুঝি ঘুমালো ? সুশীল ক্লিষ্টস্বরে বলিল, হঁ্যা । আমার গায়ের গরমে বোধ হয় আরাম পেয়েছিল ! গায়ের গরম ! জর বাড়ল আপনার ? জবাবের প্রতীক্ষা না করিয়া কাছে গিয়া কমলা তার কপালে হাত রাখিল । জর বাড়িয়াছে। অসুস্থ শরীরে সারাদিন কেন কবিতা লিখলেন ? সুশীল মৃদুস্বরে বলিল, অসুখ শরীরে বিনা কাজে দিন যে কাটে না। আলোটা জালুন তো, অন্ধকার হয়ে এল। তারপর খোকাকে নিয়ে যান। অনুস্থের সঙ্গ ওর পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয় । কমলার ইচ্ছা হইল জিজ্ঞাসা করে, অসুস্থের সঙ্গ কার পক্ষে স্বাস্থ্যকর। কিন্তু কণ্ঠস্বর কেমন শুনাইবে জানা না থাকায় কথা বলিতে সে সাহস পাইল না। আলোটা খুজিয়া নিয়া দেশলাই জালিতে সে অনাবশ্যক দেরী করিয়া ফেলিল। একটু বদল না করিয়া মুখের ভাবটা সে সুশীলকে দেখাইতে চায় না।

  • হাত মকস করার সময লেখা।

68