পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{布| দুই বৎসর পূর্বে একদিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে সুমতি কম্পিত পদে দুরু-দুরু বুকে অক্ষয় ডাক্তারের বাড়ীতে প্ৰবেশ করিয়াছিল, আজ সে সংসারের সর্বত্র মূল্য বিস্তার করিয়াছে, প্রয়োজনের কল্যাণে এত মূল্য পাইয়াছে নিজের, পরগাছা যার স্বপ্নই শুধু দ্যাখে। আসিয়াছিল দুটি কাজের জন্য—ছেলে রাখা ও রুগ্ন গৃহিণীর সেবা করা। আর এখন বাড়ীতে প্রত্যেকটি মানুষ আহার আরাম বিশ্রামের সমস্ত ভার তাহার উপর ছাড়িয়া দিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া গিয়াছে। তাহারই যেন জন্মজন্মান্তরের দায়িত্ব । অলকার হইয়াছে পক্ষাঘাত। অৰ্দ্ধাঙ্গ অবশ । দিবারাত্ৰি বিছানায় শুইয়া থাকে, কড়িকাঠের দিকে চাহিয়া আকাশ পাতাল ভাবে, বিড় বিড় করিয়া নিজের অদৃষ্ট-দেবতাকে শাপে আর প্রতিরাত্রে শান্ত স্বামীর সঙ্গে কলহ করে। বলে, “তুমি ? তুমি ছাইএর ডাক্তার, কচুর ডাক্তার।’ “তুমি নিলজি। স্ত্রীর যার এক বছরের বেশী বিছানায় পড়ে, কোন লজ্জায় সে পরের চিকিৎসা করতে যায় শুনি !” উপসংহারটা করুণ ! 'একটিবার খোকাকে কোলে নিতে পারি না। এমনি অব্দেষ্ট।’-বলিয়া সছিদ্র হাপরের মত নিশ্বাস নিতে নিশ্বাস ফেলিতে সঁ সঁ শব্দ করিয়া অলকা কঁদে । এদিকের ঘরখানা সুমতির । তাহার গায়ে কাটা দিয়া ওঠে । খোকাকে বুকে ফেলিয়া গালে গাল রাখিয়া ঘুম পাড়ানোর কায়দাটা অবশ্য অলকার চোখে পড়ে নাই, ঘুমপাড়ানো ছড়াটাই শুধু কানে গিয়াছে। তাহাতেই এত। আধা ঘুমন্ত খোকাকে কোলে নিয়া সুমতি ওঘরে যায়। “আপনার পাশে খোকাকে একটু শুইয়ে দেব দিদি ? অলকার শরীর বলিতে শুধু হাড় আর চামড়া। কোটর-গত চোখে অনেকখানি জল জমিলে তবেই গড়াইয়া পড়িতে পারে। চােখ মুছিতে গিয়া তাহার সমস্ত মুখ চোখের জলে মাখা হইয়া যায়। 3r