পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

६६ তাহার আজ একটু অতিরিক্ত শুকনো মনে হইতেছে বটে, কিন্তু সুমতি শপথ করিয়া বলিতে পারে তাহার কারণ অলকার উপস্থিত মরণ নয়, অনুপস্থিত আঘাত অথবা দুশ্চিন্তা । ঘরে ঢুকিবার পর ঠিক কতক্ষণ সময় নন্দ সীতার কথা ভুলিয়া গিয়াছিল জানিবার জন্য সহসা সুমতির মন কেমন করিয়া উঠিল। মানুষের মরণ বঁাচন যাহার ব্যবসা, ঔষধ ও আশ্বাস নিয়া যাহার দোকানকারী কান্না তাহার একেবারেই সাজে না। তবু অক্ষয়ের আরাম কেদারার সন্নিকটে একটি তেপায়ার উপর রক্ষিত মোটামোটা বইগুলির দিকে চাহিয়া সুমতির বিস্ময়ের সীমা ছিল না। বইগুলির নৈকট্য সম্বন্ধে অক্ষয় যে কি করিয়া এমন উদাসীন হইয়া আছে ঘুরিয়া ফিরিয়া তাহাই সুমতির বার বার মনে হইতে লাগিল। অক্ষয় যে বইগুলি দেখিতে পায় নাই সুমতি কোনমতেই তাহা বিশ্বাস করিতে श्रांब्रिडछिल ना । অক্ষয় সুমতির দৃষ্টিকে অনুসরণ করিতেছিল। হঠাৎ সে বলিল “খোকা অনেকক্ষণ ধরে কঁদছে, সুমতি । ওকে নিয়ে এসে ।” সুমতি নীরবে চলিয়া গেল। খোকাকে নিয়া ফিরিয়া আসিয়া অবাক হইয়া দেখিল তেপায়ার উপর হইতে বইগুলি অন্তহিত হইয়াছে। নন্দর কাছে সরিয়া গিয়া সুমতি চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিল, “ওখান থেকে বই সরালে কে ?” নন্দ বলিল “আমি। ডাক্তারবাবু ওঘরে রেখে আসতে বললেন।” সুমতির মুখ পাংশু হইয়া গেল। “ভয় করছে নাকি সুমতি ? “ভয় ? কিসের ভয় ?—বলিয়া সুমতি সরিয়া গেল। ভয়! অলকার মরণে তাহার ভয়! মৃত্যুর সঙ্গে এ যেন তাহার প্রথম পরিচয় । সর্বাঙ্গে সে যে একজনের মরণের চিহ্ন ধারণ করিয়া আছে নন্দ কি তাহা দেখিতে পায় না ? কঁদিয়া কঁাদিয়া খোকা শ্ৰান্ত হইয়া পড়িয়াছিল, না বুঝিয়া সেই অনেকক্ষণ মার মরণের মান রাখিয়াছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমাইয়া পড়িল। অক্ষয় বলিল “খোকা ঘুমিয়ে পড়েছে সুমতি, ওকে শুইয়ে দিয়ে এসো।” খোকার উপর আজ যেন তাহার দরদের সীমা নাই। GR (tGn)