পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুমতি কেন যে ঘরের সর্বত্ৰ অলকার অবলুপ্ত স্মৃতি আবিষ্কারের চেষ্টা করে। অক্ষয় তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারে না । বাহিরে ঝাম ঝাম করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে, ঘরের বাতাস ভিজিয়া ভারি, আলো মান । খোকাকে নিতে গিয়া কেমন করিয়া সুমতির হাতশুদ্ধ কয়েক মুহুর্তের उJ চাপিয়া ধরিয়াছিল অক্ষয় জানে না। ইচ্ছা করিয়া যে নয় সুমতি তাহা বুঝিতে পারিয়াছিল বলিয়াই অক্ষয়ের অনুমান । তথাপি কয়েক-মিনিট পরেই আলমারির উপরের তাকে লুকানো একতাড়া চিঠি সে খুজিয়া পাইল । অলকাকে লেখা অক্ষয়ের প্ৰেমপত্র। একখানা নয় দু’খানা নয় পাঁচিশ ত্ৰিশখান। সে যেন রঙিন সুতায় বাধা একরাশি পুরাতন, ব্যবহৃত, বিবৰ্ণ, প্ৰেম ! আজি নিশ্চয় নয়। কবে যেন সুমতি চিঠিগুলি খুজিয়া পাইয়াছিল। নহিলে সোজা আলমারি খুলিয়া ভঁাজ করা শীতের পোষাকগুলির পিছনটা এখন সে হাতড়াইবে কেন ? চিঠির তাড়াটা নিয়া গম্ভীর হইয়। অক্ষয় বলিল, 'মরা মানুষের জন্য শোক করা কর্তব্য, একথা তুমিও জান আমিও জানি।” সুমতি কিছুই বলিল না। “কিন্তু তার অত্যাচারটাও স্বীকার করে নেওয়া উচিত। কিনা সে বিষয়ে আমার রীতিমত সন্দেহ আছে সুমতি ।” এবারেও সুমতি নীরব হইল । "ওটা ভূতের উপদ্রবেরই সামিল। আত্মীয় পর কোন ভূতের উপদ্রব গ্রাহ করা উচিত কি ? সে কত বড় ভীরুতার লক্ষণ বলত !” এ যেন বিশেষ করিয়া তাহাকেই তিরস্কার করা। বড় আয়নার মধ্যে নিজের বিধবা বেশ প্ৰতিবিন্বিত হইয়াছিল, চাহিয়া দেখিয়া সুমতির চোখে জল আসিল । মাঝে মাঝে স্থগিত হইতে লাগিল বটে। কিন্তু বৃষ্টি একেবারে কমিল না। দিনগুলি রুক্ষ হইয়া উঠিতে উঠিতে আবার জলে ভিজিয়া যাইতেছে, এ বাদল আশীৰ্বাদের মতই। কিন্তু সুমতির ভাল লাগিতেছিল না। দ্বিপ্রহরে খোকাকে কোলে নিয়া নিজের ঘরে সে বসিয়াছিল, সকাল হইতে যে স্তিমিত বেদনা পীড়া দিতেছিল এখন তাহা গাঢ় হইয়া উঠিয়াছে। নন্দ আজি সারাদিন খায় নাই। দোকান হইতে সকাল সকাল ফিরিয়া সেই যে সে শুইয়াছিল। আর ওঠে নাই। tes vo (e)