পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী একটা গভীরতর বিতৃষ্ণা অনুভব করিতে করিতে সুমিলনাইন তেলের গন্ধ শু কিবার জন্য সুনীতিকে সে মনে করে। এতকাল পরে ও মেয়েদের প্রতি প্ৰমথের এই বিতৃষ্ণার ভাব বজায় খুবই স্বাভাবিক। মানুষের প্রকৃতিগত আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি তার এই ভাবটা বঁাচাইয়া রাখিয়াছে। সুনীতির কাছে তার দেহ-মন একদিন যে ভীষণ আঘাত পাইয়াছিল জীবনে তার পুনরাবৃত্তি ঘটিবার সম্ভাবনা রদ করিবার জন্য যথোপযুক্ত আয়োজন তার ভিতরে আপনা হইতে সৃষ্টি হইয়া গিয়াছে। এই আভ্যন্তরিক প্ৰতিবাদ তার এত জোরালো যে ভ্রান্তি টুটিয়া যাওয়ার মত ঘনিষ্ঠত্ত আর কোন রক্তমাংসের মেয়ের সঙ্গে তার জন্মানো সম্ভব নয়। সব মেয়েই যে সুনীতির মত এ বিশ্বাস প্ৰমথের জন্মে নাই, সাধারণভাবে মেয়েদের সে অশ্রদ্ধা করে না । অবসর সময়ে বসিয়া বসিয়া নারীবিদ্বেষের সমর্থক যুক্তিতর্কের আবিষ্কার করার চেষ্টাও সে করে না । মেয়েদের বিচার করিতে সে একেবারেই ভালবাসে না, ওবিষয়ে মাথা ঘামানোকে সে মনে করে ছেলেমানুষী। তবু সেই আঘাতটির পরবর্তী বিকারে যে অন্ধ আতঙ্ক তার হৃদয়মনে বঁাচিয়া আছে, এই বয়সে তরুণী নারীর ভালবাসা লাভ করার স্বাভাবিক পিপাসার স্থানে সে আতঙ্ক জাগাইয়া রাখিয়াছে ততোধিক স্বাভাবিক বিতৃষ্ণ । মেয়ের ভাল, মেয়েরা দেবী । মেয়ের ভালবাসিলে মানুষ ধন্য হইয়া যায় । কিন্তু কাজ নাই বাবা কারো ভালবাসায় প্ৰমথের ! এই সময় পাইবে না পাইবে না করিয়া প্রমথ একটা হাকিমী চাকরী পাইয়া গেল এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে বিবাহ করিবে না করিবে না ঘোষণা করিতে করিতে প্ৰায় হইয়া উঠিল পাগল। কোনদিন বিবাহ না করার ইচ্ছা প্ৰমথের ছিল না, আর দশটি সাধারণ সুস্থচেতা মানুষের মত জীবনটা কাটাইয়া দিবার দিকেই বরং তার ছিল বেশী ঝোক । কিন্তু চিত্ত তো এখন তার সুস্থ নয়। এখন মন্ত্রপড়া সামাজিক বিবাহের পবিত্র বঁাধনে বঁাধিয়া একটি মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী করিলে যদি মনের অসুস্থত বাড়িয়া যায়, রূপান্তর নেয় ! নিজের বৌকে আদর করিতে গেলেই যদি নাকে আসিয়া লাগে। ওমিলনাইনের গন্ধ, মাথা ঘুরিয়া উঠে, গা করে বমি বমি, আর মনে হয় যে এই রক্তমাংসের জীবটির মুখ-চোখ হাসি-গল্প মানঅভিমান চাল-চলন সব সুনীতির প্যারডি ? তার চেয়ে আর কিছুদিন মনটাকে সুস্থ হুইবার সময় দিয়া একটু ভারিকি বয়সে ভাবিয়া চিন্তিয়া কিছু করাই নিরাপদ । (8