পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আরও বেশী আশ্চর্য হইয়া যাইতে লাগিল। সে বুঝিতে পারিল যে মানুষের জীবনের অধিকাংশ অভিজ্ঞতাই একপেশে ও অসম্পূর্ণ, অধিকাংশ ধারণা ও মতবাদ অসম্বন্ধ ও অযৌক্তিক। তা না হইলে হাসিরাশির সাহচৰ্য তাকে কেন এভাবে বদলাইয়া দিবে ? কেন রসালো হইয়া উঠিবে। আগেকার নীরস মুহুর্তগুলি, কেন তুচ্ছ ও অর্থহীন মনে হইবে না। এতদিন যে সমস্তকে সে ছেলেখেলা বলিয়া মনে করিত ? যে নিজেটাকে সে এত ভালভাবে জানিত বলিয়া তার ধারণা ছিল এখন সেই নিজেরই এত সব অজ্ঞাত, অনাবিষ্কৃত পরিচয় কোথা হইতে তার কাছে ধরা পড়িতে থাকিবে ? কি বোকার মতই এতগুলি বছর ওরকম বিশ্ৰীড়াবে সে জীবনযাপন করিয়াছিল ! সুনীতির সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিবামাত্র সে যদি হাঁসিরাশির VS একজনকে বিবাহ করিয়া এইরকম পবিত্ৰ মধুর গাহস্থি্যু-জীবন আরম্ভ করিয়া দিত, যাতে, কোন বেলা কি রান্না হইবে সেটা পরামর্শ করিয়া ঠিক করার মধ্যে পৰ্যন্ত অনায়াসে যত খুন্সী প্ৰণয়ের আমদানী করা যায়, জীবনের এতগুলি বছর তবে তার ব্যর্থ হইয়া যাইত না । ওগো, শুনিছ ?—প্রমথ বলে । হাসি বলে, না, শুনছি না। একশোবার এমন বুড়ো মানুষের মত ডাকবে কেন শুনি ? কি বলে ডাকব। তবে ? কেন, এই !—বলে ডাকবে, শিস দিয়ে ডাকবে, নয় তো একটা আদরের নাম দিয়ে তাই বলে ডাকবে। প্রমথ গভীর মুখে বলে, তুমি যেচে সোহাগ নিচ্ছ, হৃদয়রাণী ? হাসি আরও বেশী গম্ভীর হইয়া বলে, নিজের জিনিস আমি যেভাবে খুশী নেব, তোমার তাতে কি ? তা ছাড়া যারা ভাল মেয়ে তারা বুঝি ছল ক’রে সোহাগ নেয় ? স্পষ্ট দাবী করে। সুনীতির সঙ্গে আরও ঢের বেশী সূক্ষ্ম হাসি তামাসা চলিত, সুনীতি আরও ঢের বেশী আটিষ্টিক ভঙ্গির সঙ্গে রসাত্মক বাক্য বলিয়া কবিত্বের সৃষ্টি করিতে পারিত, তবু স্ত্রীর হাসির ভঙ্গি ও কথাই প্ৰমথের বেশী উপভোগ্য বলিয়া মনে হয়। হঠাৎ সুনীতির প্রতি সে একটা স্পষ্ট জোরালো ঘূণার ভাব অনুভব করে। এতকাল পরে তার আজ প্ৰথম আপসোসের সঙ্গে মনে হয় যে ক্লীবের মত, দার্শনিকের মত সুনীতির অপরাধকে তার উপেক্ষা করা যেন উচিত হয় নাই, ওই ক্ষমাটা (t ዓ &ከ9