পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মের ইতিহাস দিতে হইলে স্বামীর ভাগটা ছাটিয়া ফেলিতে হইবে।”-একথা শুনিলে তাহার হাসি পায় । “তোমার জন্যে যে ভালবাসা সে তোমারি থাকবে গো, খোকার জন্য নতুন ভালবাসা জন্মাবে। তুমিই বরং আমাকে আর তেমন,-” “দেখো । খোকাকে নিয়ে আমার দিকে যখন তাকাবারও সময় পাবে না-" এমনি সব অর্থহীন কথার খেলা। অথচ ইহারি ভিতর দিয়া-দুজনের যে অনির্বচনীয় মিলন ঘটিয়া চলে প্রেরণার মুহুর্তেও কি কোন কবি কোনদিন তার মানসীর সঙ্গে তেমন মিলনের স্বাদ পাইয়াছে ? —“যে কথাটা ধরেছিলে শেষ হ’ল ?” “একটু দেৱী আছে। আজ হয়ে যেত, ঠাকুর ঝি এমন ঠাট্টা শুরু করলে--” —“মিনুর খোকার জন্য মা আর কঁদে না দেখেছি ?” “দেখেছি বৈকি। কেন বলত ?” “তোমার খোকার পথ চেয়ে আছেন । তোমার যে খুকীও হতে পারে একথা কিন্তু মারা মনেও পড়ে না !” “তোমার পড়ে ?—” -“আমি হার দিয়ে খোকার মুখ দেখব সুলতা ।” “মা যে হার দেবেন ঠিক করেছেন।” “ও, হঁ্যা । মনে ছিল না । আমি তবে কি দেব বলত ?” ‘ওর মাকে একটু ভালবাসা দিও।” এমনি ভাবে তাহার কথার পিঠে কথা গাথিয়া চলে, কখন যে তাহা হাস্য পরিহাসে দাড়াইবে কখন গভীর আলোচনার রূপ নিবে কিছুই স্থিরতা থাকে না । দুজনের মনেই যেন স্বয়ংক্রিয় গ্রামোফোন ও এক তৃপ রেকর্ড আছে, কীর্তনের পরেই কমিক গান বাজিয়া যায় এবং গ্রামোফোনের প্রথম শ্রোতা বালকবালিকার মত তাহাতেই তাহদের সবিস্ময় পুলকের অন্ত থাকে না । শেষরাত্রে হঠাৎ সুলতার ঘুম ভাঙ্গাইয়া খোকা কার মত দেখিতে হইবে এবং কি নাম রাখিলে সমবেত ভাবে দুজনের পছন্দের মর্যাদা থাকিবে এ আলোচনা করা বিকাশের কাছে কিছুমাত্র আশ্চৰ্য মনে হয় না। কিন্তু দিন ঘনাইয়া আসার সঙ্গে সঙ্গে তাহদের ছেলেমানুষী আলোচনা কমিয়া যায়। একটা ভয়ঙ্কর বিপৰ্যয় ঘটিবার প্রতীক্ষায় সুলতার দেহ যেমন অস্থির করে। মনে তেমনি একটা একটানা Qbr@