পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্মের ইতিহাস মানুষের যুগ ধর্মের প্রতি বিকাশের কৃতজ্ঞতার সীমা থাকে না । স্ত্রীকে সে আজ সত্যই শ্রদ্ধা করে । সুলতার মনে হয় সে যেন নেশা করিয়াছে। আনন্দের নেশা আতঙ্কের নেশা প্ৰাণধারণের নেশা । স্বামীর অতিরিক্ত ভালবাসার কথা একান্তে বসিয়া ভাবিতে গেলে কোথায় যেন তাহার একটু বাধিত, মনে হইত ইহাকে প্রাপ্য মনে করা অনুচিত, এত বেশী করিয়া পাওয়া অন্যায়। আজ আর পাওনার কাছে দাবীকে ছোট মনে হয় না । নিজের মূল্য নিজের কাছেই সুলতার অসম্ভব বাড়িয়া গিয়াছে। দুপুরটা ঘরে বসিয়া কঁথা সেলাই করিতে করিতে অলসভাবে ঠেস দিয়া সুলতা চোখ বোজে। এই ঘরে সে তিন বছর ধরিয়া বাস করিতেছে, তিন বছরের ইতিহাসে এ ঘর যেন ঠাসা, বাতাসে যেন পুরানো মাটির গন্ধ । এই ঘরে তার প্রথম স্বামী স্পর্শ জুটিয়াছিল। সেদিনের বুক দুরু-দুরু পুলক আবার আসিয়াছে। আকাশের অশ্র-ছাকা সূৰ্যালোক যেমন আকাশের গায়েই রামধনু, অকিয় দেয়, আত্মীয়-বিচ্ছেদ-বেদনায় পরমাত্মীয়দের সোহাগ মনে সেদিন তেমনি রঙ মিশাইয়াছিল ; ভ্ৰণস্পন্দনে যেন তাহারই চঞ্চল চেতনা ! তারপর একদিন দুপুরে খাইতে বসিয়া সুলতা খানিকক্ষণ মাখা ভাত নিয়া নাড়াচাড়া করিল, শেষে পাংশুমুখে হাত গুটিাইয়া বসিয়া রহিল। মৃন্ময়ী বলিল, ‘ওকি বৌ ? খাও ? ভারি মাসে আবার কিসের অরুচি।” স্নেহলেশ-শূন্য কণ্ঠ। এবং তাহাতে বিস্ময়ের কিছু নাই!! আর হৃদয়ে স্নেহ নাই, মমতা নাই, ঘুমানো আগ্নেয়গিরির মত তার বুকভরা শুধু জ্বালা। স্বামী তাহাকে নেয় না, এই সেদিন পাঁচ বছরের ছেলেটা মরিয়াছে। সহের অতিরিক্ত বলিয়া তাহার শোক আজ আর বেদনার ব্যাপার নয়,-মনের বিকার, হৃদয়ের রুক্ষতা । সুলতা বলিল, “আমার গা কেমন করছে ঠাকুরবি-বড খারাপ লাগছে।” “বলো কি বৌ’ বলিয়া মৃন্ময়ীর যেন বিস্ময়ের সীমা রহিল না। ক্ষণকাল একাগ্র দৃষ্টিতে সে ভ্রাতৃবধুর মুখখানি নিরীক্ষণ করিল। কতকাল পরে তাহার শুষ্ক চােখ দুটি আজ আবার জলে ভরিয়া উঠিতে চায়। মুখ ফিরাইয়া নিয়া হঠাৎ অনাবশ্যক শব্দ সহকারে মৃন্ময়ী হাকিল, ‘ওমা ! মা ! শুনিছ ? বৌ এর শরীর কেমন করছে দেখে যাও।” (ዽb” ዓ