পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী বড় বড় করিয়া সে বলিল, “ভয় করছে বৌদি ? ভারি আশ্চর্য তো !’ বলিয়া কিশোরী মেয়েটি এক মুহুর্তে গভীর বিষন্ন ও চিন্তিত হইয়া উঠিল। বিকেলের দিকে আর সন্দেহের অবকাশ রহিল না যে, আজ রাত্রির অন্ধকাবেই আকাশে একটি নূতন জন্মতারকা দেখা দিবে। ক্লিষ্টস্বরে সুলতা বলিল, “সুধা ভাই, মাকে বল ওঁর কাছে লোক যাক ৷” সুধা বলিল, ‘দাদার আসবার সময় হয়েছে, এক্ষুণি এসে পড়বে।” সুলতা খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। বাড়াবাড়ি করিতে লক্ষ। বােধ হয় কিন্তু কি করিয়াই বা চুপচাপ থাকা যায় ? ছেলের চেয়ে স্বামীর জন্য প্রতীক্ষা করিয়া থাকাটাই তাহার কাছে অধিকতর দুঃসহ হইয়াছে। এই কথাটা ইহাদের সে বোঝায় কেমন করিয়া ? খানিক পরেই সুলতা আবার বলিল, “কিন্তু আপিস থেকে ও যদি কোথা ও চলে যায়। ভাই ? কোন বন্ধু যদি বায়স্কোপে ধরে নিয়ে যায় ? কি হবে তা’হলে ? মৃন্ময়ী সারা দুপুর বার বার ঘরের সম্মুখ দিয়া যাতায়াত করিয়াছে, এ কথাটা সে শুনিতে পাইল। উকি দিয়া বলিল, “কি আর হবে তা হোলে পৃথিবী রসাতলে যাবে। সে পুরুষ মানুষ এসে তোমার কাছে কি করবে শুনি ? আমরাও ছেলে বিইয়েছি বৌ, এমন বেহায়াপনা কখনও করিনি!” সে অতীত কথা । মনে হয়, এ জন্মে বোধ হয় ঘটে নাই। কী যন্ত্রণার মধ্যেও বাহিরে স্বামীর অস্থির পদচালনার বিষয়ে সচেতন হইয়াছিল। আজ তাহা অস্পষ্ট মনে পড়ে মাত্র । সেই খোকা আজি নাই, সেই স্বামী আর খবর নেয় না। আপষ্ট ভাবেও সেই শীতের রাত্রির কথা যে স্মরণ আছে ইহাই যেন আশ্চৰ্য । হয়ত আজ রাত্রে অস্পষ্ট থাকিবে না,-কে বলিতে পারে ? বেী যখন ব্যথায় কাতরাইতে আরম্ভ করিবে তাহার চিত্তেও হয়ত অচেতনার স্পর্শ লাগিবে, বুকের মধ্যে চঞ্চল পদে একজন হাটিয়া বেড়াইবে, বিনিদ্র রাজনী আর পোহাইতে চাহিবে না । মৃন্ময়ীর সর্বাঙ্গ জালা করিতে লাগিল। সিডি ভাঙ্গিয়া ভাঙ্গিয় তাহার প। দুটি শ্ৰান্ত হইয়া পড়িয়াছিল, রোয়াকে পিড়ি পাতিয়া বসিয়া সে ভাবিতে লাগিল আজ রাত্রিটা কোথাও কাটাইয়া আসা যায় না ? পাড়ার কাহারো বাড়ীতে হোক, ভবানীপুরে পিসিমার বাড়ীতে হোক, এবাড়ীর সমারোহের সংবাদ যেখানে আজ পৌছিবে না ? Gt G9 0