পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মজুর মিস্ত্রীর বেতন পায়। বছর খানেক বিয়ে করেছে। একখানার বেশী ঘর ভাড়া নেবার ক্ষমতা তার নেই, বিয়ের পর মাকে কোথায় যেন কোন আত্মীয়ের কাছে সরাবার ফিকিরে ছিল, পেরে ওঠে নি। ক্ষান্ত পিসীর দু’একটা গয়না। আর সত্তর আশী টাকা নগদ আছে। জোর তাই খাটানো চলে নি একেবারেই। প্ৰায় সত্তর বছরের বুড়ী, আজি মরে কি কাল মরে ঠিক নেই, তার ওপর জোরই বা খাটানো যায় কি করে ? ছেলের বিয়ের পর বর্ষা নাম পৰ্য্যন্ত মাসখানেক ক্ষান্ত পিসী এখানে সেখানে রাত কাটিয়েছে, তারপর মাঝখানে একটুকরো চট টানিয়ে ক্ষান্ত পিসীর বিছানা করতে হয়েছে বিন্দে ও তার নতুন বৌয়ের বিছানার ঠিক আড়াই হাত তফাতে। কদিন মরার মত নি:শব্দ হয়ে থেকেছে৷ বিন্দে আর তার বেী। তারপর শোনা গেছে তাদের চাপা গলায় ফিসফিসানি প্ৰেমালাপ ও প্রেমের মৃদু ইঙ্গিত। তারও পরে ছেলেবৌয়ের চীৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া অভ্যস্ত হয়ে গেছে ক্ষান্ত পিসীর । শিউশারণের বাড়ী গয়া জেলায় । প্ৰায় আট ন’ বছর ধরে সে এ বাড়ীতে থেকে একনিষ্ঠভাবে দু’টি সাধনা করে গেছে, গোপ পাকানো ও টাকা জমানে। মাঝে মাঝে সে দেশে যেত, সম্প্রতি দেশে গিয়ে একটি চতুৰ্দশী মোটাসোটা বেী নিয়ে ফিরে এসেছে। গলায় হাসুলী, পায়ে মল, হাতে চারটি রূপার ও গণ্ড দুই কঁাচের চুড়ি পরা, হলদে কাপড় জড়ানো ছিটের জামা গায়ে বিশালস্তনী বৌটিকে শিউশরণ যে অত্যন্ত ভালবাসে তার প্রমাণ পাওয়া যায় বৌয়ের প্রতি তার একান্ত আনুগত্যে । ঘরের কাজ আর বৌয়ের সেবা করায় তার উৎসাহের যেন অন্ত নেই। পাশের ঘর থেকে রাণী রাত্রে তাদের প্ৰেমালাপ শোনে এবং সকালে সকলকে শুনিয়ে খিল খিল করে হাসে । সরযু প্ৰায় ধমকের সুরে অবজ্ঞা ভরে বলে, ‘নেহি নেহি । মেরা তবিয়ৎ আচ্ছা নেহি হ্যায় ।” শিউশরণ মিনতি করে, তোষামোদ করে, পায়েও নাকি ধরে। তারপর সব চুপচাপ। গাজার উৎকট গন্ধ ভেসে আসে খানিক পরে। তারও পরে উদাস কণ্ঠে শিউশরণ ভজন গান ধরে। আহা, তার করুণ ভজন শুনে চােখে নাকি জল আসে রাণীর । V9