পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী এমন সময় সেখানে মহেন্দ্ৰ আসিয়া হাজির। দু’জনকেই মহেন্দ্র সম্ভবতঃ খুন করিয়া ফেলিত কিন্তু নাগাল সে পাইল না। একজনেরও । লম্বা রোগ বাইশ বছরের ছোকরা রসিক চোখের পলকে উধাও হইয়া গেল, আর স্বভাব খারাপ হইলেও ঘরের বৌ এত রাত্রে ঘরেই থাকিবে জানিয়া মহেন্দ্ৰ ছুটিয়া গেল রসিকের পিছনে। সেই অবসরে গোয়ালের পিছন দিয়া সুভদ্ৰা পলাইয়া গেল উল্টা দিকে । সেদিকেও ঘুমন্ত গ্রাম ছিল অনেক দূর অবধি ছড়ানো, কুকুর ডাকিতেছিল এদিকে ওদিকে, দূরে শোনা যাইতেছিল চৌকিদারের হাক আর জন্মকালো ভেজা অন্ধকার ভরাট করিয়া খেয়ালের নাগাল ছড়াইয়া উঠিয়াছিল র্যাঙের একটানা আওয়াজ। সোহাগী বৌ রঙীন শাড়ী পরিতে পায় বলিয়া আর রঙীন কাপড় অন্ধকারে সাদা কাপড়ের মত সহজে চোখে পড়ে না বলিয়া নিজেকে সুভদ্রার মনে হইতেছিল ভাগ্যবতী । গ্রামের শেষ বাড়ীটি শুধু গোটা দুই ভাঙ্গা ঘর, তারই একটিতে এত রাত্রে একজন গান গাহিতেছিল। চেনা চলতি গান, সুভদ্রার নিজের গান। দাড়াইয়া দাড়াইয়া কিছুক্ষণ সে গান শুনিল। খণ্ডিতা রাধার মানভঞ্জনের জন্য তখন সে যে গানটি গাহিত ভাঙ্গা মোটা গলায় ভুল সুরে কথা বদলাইয়া গাহিতেছে বটে। অদৃশ্য গায়ক, কিন্তু আবেগ আছে লোকটার। আবেগভরা লোকগুলি বড় অধীর হয়। ভিজা শাড়ীখানা গায়ে অ্যাটিয়া গিয়াছে, দেখিবামাত্র হয় তো সাপটাইয়া ধরিবে । ওভাবে কেউ সাপটাইয়া ধরিলে বড় খারাপ লাগে সুভদ্রার । গা বমি বমি করে, দম, আটকাইয়া আসে, মনে হয়। সে যেন হঠাৎ এগার বছরের মেয়ে হইয়া গেছে আর যাত্রা দলের সেই যুধিষ্ঠিীর শেষরাত্ৰে শ্ৰীকৃষ্ণের বেশধারী তাকে আসরের খানিক তফাতে একটা ছোট আটচালার নীচে ডাকিয়া নিয়া গিয়া এক হাতে তার মুখ চাপিয়া ধরিয়াছে আর আরেক হাতে বাধিয়া ফেলিয়াছে কাছি দিয়া বঁধার মত । কিন্তু উপায় ছিল না। এত রাত্রে কে আর তাকে খাতির করিবে ? সুভদ্রাকে ভিতরে গিয়া দাড়াইতে হইল। সাধন বৈরাগী মূৰ্ছা গেল না, দু'চোখ বড় বড় করিয়া গানের বদলে একটা অদ্ভুত আওয়াজ করিতে লাগিল। সুভদ্ৰা বলিল, “আমি গো আমি।” তখন সাধন বৈরাগী শান্ত হইল। কিন্তু আবার অশান্ত হইয়া উঠিল। অল্প ক্ষণের মধ্যেই, আনন্দ ও উত্তেজনায়। Ve O R