পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথমে স্বভাদ্রা ভাবিয়াছিল, রসিকের জন্য বোধ হয়।একটু মন কেমন করিবে । একটু যেন পছন্দ হইয়াছিল রসিককে তার, দু'একদিন গভীর রাত্রে তারা যেন মনে হইয়াছিল, বেতালা বঁাশীর সুরে জানান দিয়া আজ কি রসিক আসিবে ? ভাসা ভাসা একটু রসজ্ঞান ছিল রসিকের, দুপুর রাতের গোপন মিলনে মাঝে মাঝে একটু রসের সঞ্চারও যেন সে করিতে পারিত। কিন্তু বহুদিন ধরিয়া যে ভাবে তার মন কেমন করিয়া আসিয়াছে এখনও তেমনিভাবে মন কেমন করিতে লাগিল বটে, সেটা রসিকের জন্য নয়। স্বামীর ঘরে ফেলিয়া আসা শাড়ী গয়নার মত রসিকও তুচ্ছ হইয়া গিয়াছে, এতটুকু আপসোসও সুভদ্রার নাই। রসিক বলিয়া কেউ কি কোনদিন তার মাথার চুলে হাত বুলাইয়া দিতে দিতে মৃদুস্বরে বর্ণনা করিত আসিবার সময় কোন বাড়ীতে নতুন বর ও বধূর ঘরে বেড়ার ফাকে উকি দিয়া একজনকে কি ভাবে আর একজনের পায়ে ধরিয়া সাধাসাধি করিতে দেখিয়া আসিয়াছে, শুনিতে শুনিতে তার মনে হইত। সে যেন হাল্কা হইয়া গিয়াছে, মুক্তি পাইয়াছে, চাচের বেড়ায় ঘেরা চারকোণা জেলখানায় জোরালো দু’টি বাহুর বন্ধন যেন তার আর নাই । মনটা সুভদ্রার খুত খুত করে, এরকম হওয়া উচিত ছিল না। রসিকও শেষ পর্যন্ত তাকে ফাকি দিল, এতটুকু স্থান দাবী করিতে পারিল না তার মনে। সাধন বৈরাগীর চেহারাটি বড় সুন্দর। প্ৰথম দিন তাকে দেখিয়াই সুভদ্ৰা তীব্র বিদ্বেষ আর হিংসা অনুভব করিয়াছিল, মনে হইয়াছিল এই লোকটাই বুঝি জীবনযুদ্ধে তার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী। তারপর সাধনের অনেকদিনের প্রাণপাত সাধনার পুরস্কারস্বরূপ দূর হইতে একটু একটু ভাব করিয়া এতকাল তাকে শুধু সে যন্ত্রণাই দিয়া আসিয়াছে। এখন হঠাৎ একেবারে ধরা দিয়া, অনেক দূরের অচেনা এক সহরে অজানা মানুষের মধ্যে ছোট একটি টিনের ঘরে চব্বিশ ঘণ্টা একসঙ্গে বসবাস করিবার মত ভয়ানকভাবে ধরা দিয়া, সুভদ্ৰা দেখিল লোকটাকে সে যেরকম ভাবিয়াছিল। সে মোটেই সে রকম নয়। বিদ্বেষ বা হিংসার কোন কারণ নাই, বরং রীতিমত অবজ্ঞা করা চলে। যে জোরালো আবেগ ও উচ্ছাসের আশঙ্কা সে করিয়াছিল সেটা জোয়ারের মত নয়, কলের ফোয়ারার মত। তাও আবার সে উৎসের ভাণ্ডারে সঞ্চয় বড় কম, কলটাও গিয়াছে বিগড়াইয়া, হঠাৎ প্ৰচণ্ড বিক্রমে উথলাইয়া উঠিয়া অল্পক্ষণের মধ্যেই ঝিমাইয়া পড়ে। শুধু চেহারার টানে অনেক মেয়ে আসিয়া তার রসটুকু শুষিয়া Nge N9