পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী নিয়া গিয়াছে বুঝা যায়। আর রাখিয়া গিয়াছে অহঙ্কার, স্বার্থপরতা আর পাগলামি, যে সব কোনদিন কোন মেয়ের কোন কাজেই লাগে না । সুভদ্রা হতাশ হইয়া ভাবিল, তাইতো । সে রাত্রে ভিজা রঙীন শাড়ীটি ছাড়িয়া সুভদ্রা সাধন বৈরাগীর গেরুয়া লুঙ্গি আর আলখাল্লা দিয়া নিজেকে ঢাকিয়াছিল। পরদিন পথে তার জন্যে দু’সেট শাড়ী ও সেমিজ কিনিয়া গেরুয়া রঙে ছাপাইয়া নেওয়া হইয়াছিল। তখন দু'জনকে দেখিয়া মানুষের মনে হইয়াছিল, স্বর্গের কোন দেবতা বুঝি একটি অপসারকে সেবাদাসী করিয়া মর্ত্যলোকে বেড়াইতে নামিয়া আসিয়াছেন এখানে ওখানে যে ক’টা দিন তারা ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে, কত লোক সাগ্রহে তাদের সেবা ও ভোগের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছে, আশ্রয় দিয়াছে, প্ৰণামীও দিয়াছে। সুভদ্রার বড় ভাল লাগিয়াছিল। সে জীবন। কোথায় যাইবে, কোথায় থাকিবে, কি খাইবে, কে জানে ! পথ চলিতে আলস্য বোধ করিলে একটা গরুর গাড়ীকে থামাইয়া উঠিয়া বসিলেই হইল। বঁধানে বড় সড়কে একদিন দামী একটা মটরগাড়ী দাড় করাইয়া দুজনে উঠিয়া বসিয়াছিল, হাওয়ার বেগে চল্লিশ মাইল পথ পার হইয়া গিয়া পৌছিয়াছিল। সদরে। ক্ষুধা পাইলে ময়রার দোকানে খাবার চাহিয়া খাইলেই হয়, মুদীর দোকানে চাল-ডাল চাহিয়া গাছতলায় রাধিলেই হয়, নয়তো গৃহস্থের বাড়ী গিয়া বলিলেই হয়, আমরা আসিয়াছি অন্ন দাও । পয়সা দরকার হইলে, দু’চার দশজনের কাছে চাহিলেই চলে। আশ্রয় তো আছে সর্বত্র, মুচির ভাঙ্গা ঘরে নোংরা মেঝেতে সঙ্গের কম্বল বিছাইয়া চামড়ার গন্ধ নিশ্বাস নিতে নিতেও ঘুমানো যায়, ফুল ও চন্দনের গন্ধভরা মন্দিরের বাহিরে অতিথিশালায় জীবন্ত মানুষের ভাপৎসা গন্ধ নিশ্বাস নিতে নিতেও ঘুমানো যায়, চোর ডাকাতি কি খুনির আস্তান সে বিষয়ে মাথা না ঘামাইয়া আশ্রয় নেওয়া যায় বড়লোক গৃহস্থের বাড়ীতে। গেরুয়াধারী নরনারীর তো সম্পদ কিছু থাকে না পুণ্য ছাড়া, যা থাকে তার উপরেও তো লোভ করা চলে না, কামনাও করা চলে না। সুন্দরী সন্ন্যাসীকে । তাতে পাপ হয়, পাপ করিলে মানুষ নরকে যায়। এমন নির্ভর নিশ্চিন্ত বাধা বন্ধনহীন সহজ সরল জীবন যাপনের সুযোগ থাকিতে মানুষ যে কেন দম আটকাইয়া পচিয়া মরে ঘরের মধ্যে ! কিন্তু সাধন বৈরাগী বলিয়াছে, “উহু, এক জায়গায় স্থিতি হয়ে না। বসলে কি চলে ?”