পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাদ সুভদ্ৰা যদি বলিত খুব চলে, সাধনকেও অবশ্য তা মানিয়া নিতে হইত। কিন্তু মন মরা বিরক্ত আর নিরুৎসাহ সঙ্গী যদি সারাদিন প্যান প্যান করে কাণের কাছে আর মুখ ভার করিয়া থাকে চোখের সামনে, মুক্তিও কি মানুষের ভাল লাগে ? এই সহরে তাই তারা নীড় বঁাধিয়াছে। সুভদ্ৰা ভাবিয়াছে, আর যাই হোক, যা খুশী তো করা চলিবে এখানে, পরের কর্তালি, পরের ইচ্ছা অনিচ্ছা বিধি নিষেধ তো তাকে ঘেরিয়া থাকিবে না । ঘর বঁাধিলে রোজগারের ব্যবস্থা করা দরকার। সাধন বৈরাগী বলিল, ‘ভিক্ষে করা চলিবে না। কিন্তু।” কোন রকমে দিন কাটানোর সঙ্গতি সাধন বৈরাগীর ছিল, তার মা রাখিয়া গিয়াছে। জীবনে সে প্ৰথম একতার হাতে । ভিক্ষা করিতে বাহির হইয়াছে সুভদ্রার জন্য। বাহির হইয়াছে অসময়ে, মানুষ যখন ভিখারীকে তাড়াইয়া দেয়। সুভদ্রা তাকে বঞ্চিত করে নাই, নিজেই ভিক্ষা দিতে আসিয়াছে, মুচকি হাসিয়া বলিয়াছে, “একটা গান কর তো বৈরিগি ঠাকুর।” সুভদ্র। তাই তামাসা করিয়া বলিল, “কেন ভিক্ষে তো তুমি করতে বৈরিগি ঠাকুর ? অনেক তামাসাতেই সাধন বৈরাগী পুলকিত হইতে জানে না, এদিক দিয়া মানুষটা সে একটু ভোতা । রোজগারের উপায়টা ঠিক করিল। সুভদ্ৰা । বাড়ীর সামনে রাস্তার ধারে যে হাত তিনেক চওড়া বারান্দার্টুকু আছে সেখানে দু'টি দোকান খোলা হইল, পান বিড়ি আর তেলেভাজার দোকান। পানবিড়ির দোকানোর ভার রহিল। সাধনের, তেলেভাজার দোকানের ভার রহিল সুভদ্রার। বাড়ীওয়ালা এবং বাড়ীর আরও তিন ঘর ভাড়াটের কাছে চাওয়ামাত্র অনুমতি পাওয়া গেল । দোকান খোলার আগের দিন সুভদ্ৰা বলিল, "সবাইকে বলে এসো, আজি সন্ধ্যেবেলা কৃষ্ণলীলা গান গেয়ে শোনাব। দোকান যে খুলছি জানানো তো চাই সবাইকে ?” আসর করা হইয়াছিল উঠানে, সন্ধ্যাবেলা সেখানে মানুষ আর অ্যাটে না । কৃষ্ণলীলার অনেক গান সুভদ্ৰা জানিত, একাই সে তিন ঘণ্টা আসর জমাইয়া রাখিল। অনেকদিন এ সব গান সে গায় নাই, একটু ভয় তার ছিল গানগুলি ঠিকভাবে গাহিতে পরিবে কি না । কিন্তু আরম্ভ করা মাত্র আগের মতই We