পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাদ সিগারেট ফুরাইয়া গেল আধা ঘণ্টার মধ্যে, বেগুনি ফুলুরি ভাজিয়া সুভদ্রা অৰ্দ্ধেক লোকের দাবী মিটাইয়া উঠিতে পারিল না। সকলেই সুভদ্রার গানের প্রশংসা করিতে চায়, বলিতে চায় যে বেগুনি ফুলুরির এমন স্বাদ তো জীবনে তারা পায় নাই। সঙ্কীর্ণ বারান্দায় উৰু হইয়া বসিয়া আর বারান্দার সামনে গোল হইয়া দাড়াইয়া সকলে যেন একটি বৈঠক বসাইয়া দিল। লোচন কামার প্রতিমা গড়িতে ওস্তাদ, একটি মাত্র বেগুনি খাইয়া যেন নেশা হইয়াছে এমনি ভাবে সে আধঘণ্টা হা করিয়া চাহিয়া রহিল সুভদ্রার বুকের দিকে, আর ভাবিতে লাগিল, একটিবার মুহুর্তের জন্য কাপড়ের নীচে সুভদ্রার স্তন দু'টি দেখিতে পাইলেই সে ঠিক বুঝিতে পারিত তার প্রতিমার বুকের মাটির টিপিগুলির চেয়ে ও দু'টি নিটােল বতুলাকার কি না । সতীশ গোয়ালা ভাবিতে লাগিল, ইনি নিশ্চয় সাক্ষাৎ ভগবতী। বংশী হালদার সারাদিন মিউনিসিপ্যালিটির ট্যাক্স আদায় করিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়, সুভদ্রার গেরুয়া বেশ যেন রোদে ঝলসানো সহরের সুরকির পথের মত চোখে তার ধাধা। লাগাইয়া দিতে লাগিল। নটাবর একজন বড়লোকের খাতিরের খানসামা, সে ভাবিতে লাগিল, সুভদ্রার সঙ্গে একবার যদি ঘনিষ্ঠত করাইয়া দেওয়া যায়, কি খুশীই বাবু হইবেন। এই চারজন ছাড়া সকলেই কম বেশী কথা বলিতেছিল, দু’একজন কথা বলিবার চেষ্টায় গিলিতেছিল টোক । ‘এবার আমি রাধতে যাই ? বলিয়া এক সময় সুভদ্ৰা ভিতরে চলিয়া গেল । আবার দোকান খুলিল একেবারে সেই বিকালে। একবেলাতেই দোকানদারিতে তার বিতৃষ্ণ জন্মিয়া গিয়াছে। লোকগুলি বড় ভোতা, বড় নীরস। বেগুনি ফুলুরি কিনিতে আসিয়া তাকে যেন সকলেই বাধিয়া ফেলিতে চায়, তার সাহচর্যে ভুলিয়া যাইতে চায় নিজেদের। বিকালেও খদের আসিল অনেক এবং দিন দিন খদের সংখ্যা বাড়িতে লাগিল । তখন বেগুনি ফুলুরি ভজিবার জন্য একজন লোক রাখিয়া দেওয়া হইল। সুভদ্ৰা মাঝে মাঝে আসিয়া পাঁচ দশ মিনিট বারান্দায় বসিতে লাগিল আর নিজের হাতে বিক্ৰী করিতে লাগিল ভাজা জিনিসগুলি। বৈঠক তাই ভাঙ্গিয়া গেল। কিন্তু সেজন্য বিক্ৰী কমিল না। বেগুলি ফুলুরিও কম মুখরোচক জিনিস নয়। বৈঠক না বসুক, লোচন, সতীশ, বংশী আর নটাবর নিয়মিত ভাবে আসে। কেউ সকালে, কেউ বিকালে । সুভদ্ৰা না থাকিলে গল্প করে সাধনের সঙ্গে, সুভদ্ৰা আসিলে দু'এক পয়সার বেগুনি কেনে আর দু'একটি কথা কয়। Ve o