মানিক গ্ৰন্থাবলী নটবর একদিন তাকে বাবুদের বাড়ী গান গাহিবার বায়না দিয়া গেল। শুনিয়া লোচন বলিল, “না, না, অমন কৰ্ম্মোও কোরো না। ওর বাবু বড় খারাপ লোক।” সতীশ এবং বংশীও সায় দিয়া বলিল, “যেও না, বিপদ হবে।” সুভদ্ৰা বলিল, “বিপদ হবে ? কিসের বিপদ ?” তারপর হাসিয়া বলিল, “বেশ তো, তোমরা তবে দশটা টাকা দাও আমায়, যাব না । তোমাদেরি না হয়। গান শুনিয়ে দেব ।” পরদিন সত্যই তারা দশটা করিয়া টাকা নিয়া হাজির। দশটা করিয়া টাকা দেওয়া তাদের পক্ষে এমনিই সহজ নয়, প্রতিদানে কিছু পাওয়া যাইবে কিনা সন্দেহ থাকিলে সেটা আরও কঠিন হইয়া দাঁড়ায়। বুঝিয়া সুভদ্রা খুশী হইল বটে, মন কিন্তু তার ভিজিল না । এসব ফাকি সে জানে। সাতদিন একত্র বসবাস করিবার পর সে একটি টাকা বাজে খরচ করিলে এরা প্ৰত্যেকে তার সঙ্গে রীতিমত ঝগড়া করিবে । তা ছাড়া, এবেলা টাকাটা নিলে ওবেলা এরা এক পাওয়া মাত্র তার হাত ধরিয়া টানিবে। তার চেয়ে নটবরের বাবুর বাড়ী গান গাহিতে যাওয়া अgeदक डब्ल । গান। কিন্তু সেখানে জমিল না,-সুভদ্রার গান। আসরে ঝালর বসানো তাকিয়ায় হেলান দিয়া উপস্থিত ছিল শুধু বাবুর কয়েকটি বন্ধু এবং তবলচি ও সারেঙ্গীর কাছে সহজ অভ্যন্ত ভঙ্গিতে মেরুদণ্ড সিধা করিয়া বসিয়াছিল আরেক জন মানুষ। তার চােখে কাজল আর ছোট নূরুটি লালচে রঙে রাঙ্গানো। ধৈর্যের প্রতীকের মত সে স্থির হইয়া বসিয়াছিল, আর বঁ হাতের আঙ্গুলের সন্তপণ স্পর্শ ধীরে ধীরে বিলাইয়া দিতেছিল নূরে। সুভদ্ৰা প্ৰথম গানটি আরম্ভ করার পরেই বাবু আর তার বন্ধুদের মুখে মৃদুহাসি ফুটিয়া উঠিল। কিন্তু এ লোকটি চােখের একটি বাড়তি পলকও ফেলিল না। সুভদ্ৰা তিনটি গান গাহিবার পর বাবু বলিল, ‘এবার তুমি বিশ্রাম কর। ওস্তাদজি, আপনি এবার মেহেরবানি করুন তবে ?” ওস্তাদ এবার একটু হাসিয়া মাথাটি সামনের দিকে সামান্য নীচু করিল।-- “সোজা সুরের একটা বাংলা গান গাই ? ‘বলেন কি ওস্তাদজি, আপনি বাংলা গান জানেন ?” সিগারেটের ধোয় না। ছাড়িয়াই সবিস্ময়ে কথাটা বলিয়া বাবুর এক বন্ধু কাশিতে লাগিল। সুভদ্ৰা মৃদুস্বরে বলিল, “জল খান, দু’টোক জল খেলেই সেরে যাবে।” বন্ধুর কাশি থামিলে ওস্তাদ বলিল, “জানি। কিনা সে তো মালুম হবে শুনলে ?” Ney
