পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ভেবে চিন্তে বললাম, এক কাজ করা যাক আসুন । আপনি খাটে খোকাখুকীদের কাছে শোবেন যান, আমি এখানে শুয়ে থাকি।” “আপনি কি এখানে শুতে পারবেন মশায় ! পা বেরিয়ে যাবে।” আমি হেসে বললাম, ‘একটু পা বেরিয়ে থাকলে কিছু আসবে যাবে না।” লোকটি গম্ভীর চিন্তিত মুখে বলল, “তা'ছাড়া সে বড় হাঙ্গামা ।” অতগুলি ঘুমন্ত ছেলেমেয়েকে তুলে খাট খালি করার চেয়ে এ ব্যবস্থার হাঙ্গামা বেশী হওয়া কি করে সম্ভব কোন মতেই ভেবে পেলাম না । লোকটি অন্যমনস্কভাবে বলতে লাগল, “কি জানেন, আমাকে তাহলে আপনার ধরাধরি কবে খাটে নিয়ে যেতে হবে, উনি এক পারবেন না ।” কাপড় তুলে ধরতে দেখলাম হাটুর নীচে থেকে দুটি পা-ই ভদ্রলোকের কাটা । ‘সিন্দুকের ওপরে শুতে আমার অসুবিধে নেই, পা বেরিয়ে যায় না। আপনি অবিশ্যি এতক্ষণ ভাবছিলেন, বাড়ীতে অতিথি এলো আর এ ব্যাটা দিব্যি আরাম করে সিন্দুকের ওপর গাট হয়ে বসে আছে। কি করব মশায়, নামবার ক্ষমতা থাকলে তো নামিব ।” আমি বললাম, ‘আহা, আপনার তো বড় কষ্ট । ঘর চাপা পড়ে পা ভেঙেছিল বুঝি ? “আজ্ঞে না, ট্রেনে কাটা গেছে, দশ বার বছর আগে ।। ঘর তো আমার ভেঙ্গে °८८छ् ऊ বছর-সেই যে ভীষণ ঝড় হয়েছিল সাতই আশ্বিন ?--সেই ঝড়ে । বড় ঘর তিনখানাই পড়ে গেল, খাড়া রইল। শুধু এই ছোট ঘরখানা।' ঝড়ে বড় ঘরই পড়ে। বড়র পতনের এই বিধানটা চিরদিন নির্দিষ্ট হযে আছে। মহিলাটির সাহায্যে লোকটিকে খাটে চালান করে দিয়ে আমি সিন্দুকের ওপর পা গুটিয়ে শুয়ে পড়লাম।--বেড়ার দিকে মুখ করে । ঘোমটা টানা মহিলা এবং তার বড় মেয়েটিও তো শোবে । আলোটা জলতে লাগল, সম্ভবতঃ ঘবে অজানা অচেনা মানুষ থাকার জন্য । শুয়ে শুয়ে আমি ভাবতে লাগলাম, আমাকে আশ্রয় দেওয়া কি এদের উচিত হয়েছে ? আশ্ৰয় না দেওয়ার অধিকার তো এদের ছিলই, কেবল তাই নয়, আমাকে আশ্রয় দেওয়া কি এদের অন্যায় হয় নি ? VeR o