পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e নিদ্রাপুরীর সদর গেটটা প্রত্যহ ঝন ঝন শব্দ করিয়া খুলিয়া যায়। ভোরে ঘুম ভাঙ্গিলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে বলিয়াই যেন মিউনিসিপ্যালিটির কর্তৃপক্ষ রাস্তায় জল দিবার গাড়ীতে প্রচুর শব্দেরও ব্যবস্থা রাখিয়াছে। সমস্ত বিছানা হাতড়াইয়া বালিশের পাশে চশমার খোজ মিলিল। কাল ঘুমের চোখে খাপে ভরিয়া রাখিতে মনে ছিল না, কখন মাথার চাপে চ্যাপ্টা হইয়া গিয়াছে। টিপিয়া টিপিয়া ডাটগুলি যথাসম্ভব সোজা করিয়া চশমা নাকে লাগাইয়া সে উঠিয়া পড়িল। মন্দ হয় নাই। অস্বাভাবিক চাকচিক্যে ভোরের আলো একেবারে অপার্থিব হইয়া উঠিয়াছে। মোটা একটা চুরুট ধরাইয়া হেরম্ব পথের উপরে খোলা বারান্দায় গিয়া দাডাইল। ধূলা ভিজাইবার সমারোহ সমাপ্ত করিয়া মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ী বিদায় নিয়াছে। পথের ওদিকে ছোট গলিটির মুখে দাড়াইয়া আছে একটা ছ্যাকড়া ঘোড়ার গাড়ী। গলির ভিতরে বোসেন্দের একতলা বাড়ীটি খালি পড়িয়াছিল, কোন অজ পাড়াগ হইতে তাহার ভাড়াটে আসিল বোধ হয় । গাড়ীর ছাদে যে জিনিসগুলি হেরন্থের চোখে পড়িল, গ্ৰাম্য গৃহস্থের সংসার ছাড়া কুত্ৰাপি তাহা দেখিতে পাওয়া যায় না । রঙ চটা টিনের তোরঙ্গ, বাক্সহীন সিঙ্গল রীড হারমোনিয়াম ও ময়লা কাপড়ের বেঁাচক হইতে আরম্ভ করিয়া চালের বস্তা, ডালের হঁড়ি, মসলা রাখা টিন, ঝুড়ি ভরা কড়াই, খন্তি হাতা প্রভৃতি রান্নার সরঞ্জাম, এক পোটল অৰ্দ্ধ শুষ্ক পুইশাক এমন কি গোবর মাখা গরু বাধা দড়ি পর্যন্ত গাড়ীর ছাদে স্থান পাইয়াছে। ক্ষুদ্র এক টুকরি কয়লাও ইহারা মমতা বশে ফেলিয়া আসে নাই। ঘুম ভাঙ্গিয়া চোখের সামনে এ যেন পরম উপভোগ্য দ্রষ্টব্যের আবির্ভাব। সকাল বেলার আলস্য এ হেন উপলক্ষ্য পাইয়া সুমিষ্ট হইয়া উঠিল। মন্থর চিন্তাযুক্ত মন দিয়া স্তিমিত নেত্ৰে হেরম্ব আরোহীর অবতরণ দেখিতে লাগিল। প্রথমে নামিল একটি দৈত্য। গায়ের রঙ নিকষ কালো, মাথার চুল ধবধবে সাদা । বয়স বড় কম হয় নাই, কিন্তু যে গ্রামে ইহার বাস তার আশে পাশে তি হইলে এখন পর্যন্ত পুলিশ সর্বপ্রথমে ইহাকে ধরিয়া নিঃসন্দেহ টানাটানি VRS