পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী করে। গায়ের বিবর্ণ থাকী সার্টটা শরীরের চাপে ফাটিয়া যাওয়ার উপক্রম করিয়াছে, পরণে ছয় হাত মলিন ধূতি, নিজেও সে পাঁচ হাতের কম লম্বা নয়, পায়ে ধূলি মলিন চটি। তুচ্ছ মানুষ, দেহের মানুষ। শক্তি যতই থাক, কুরূপের সীমা নাই। শুধু হেরম্বের দু'চোখে ঈৰ্ষা ঘনাইয়া আসিল । কিন্তু সে মুহুর্তের জন্য। এক হাতে গাড়ীর দরজা চাপিয়া ধরিয়া অন্য হাতে শাড়ীর প্রান্ত উচু করিয়া (হাঁটুর কাছে একটি লম্বা ক্ষতের দাগ হেরন্থের চােখে পড়িল ; বহুদিন পরে মেয়েটির কথা ভাবিতে গেলে এই চিহ্নটি সর্বপ্রথমে র্তাহার স্মরণে আসিতা) এবার যে সন্তৰ্পণে অবতরণ করিল। তাহাকে দেখিলে চোখেব পলক বন্ধ হইয়া যায় । দৈত্যের পিছনে এ যেন অপহৃত রাজকন্যার আবির্ভাব । আধি হাত ঘোমটায় মুখ ঢাকা পাছাপাড় কোরা শাড়ী পরা দৈত্যবধার পরিবর্তে ইহাকে নামিতে দেখিয়া হেরম্বের চুরুট টানা বন্ধ হইয়া গেল। দৈত্যকে গাড়ীর ছাদের জিনিসগুলির কর্তা বলিয়া অনায়াসে ভাবা যায়, কিন্তু এই মেয়েটিব ভর্তা বলিয়া কল্পনা করা চলে কেমন করিয়া ? রূপার হাসুলিতে হীরার পদকেব মত তাহা একান্ত অবিশ্বাস্য । ভর্তা নিশ্চয়ই নয়,-তৃত্য। স্বামী গাড়ীতে আছে, এইবার নামিবে। হেরম্ব উগ্ৰ কৌতুহলের সহিত প্ৰতীক্ষা করিতে লাগিল। নামিল শুষ্ক শীর্ণ এক বৃদ্ধ। ঠিক যে নামিল তাহা নয়, দৈত্য তাহাকে একপ্ৰকার কোলে করিয়াই নামাইয়া দিল । মেয়েটি তাহার হাত ধরিয়া এক পাশে সরাইয়া দাড় করাইয়া দিয়া জিনিস নামানোর তদ্বিরে ব্যাপৃত হইয়া গেল। বৃদ্ধ নড়েন চড়েনা সেইখানে ঠায় দাড়াইয়া মাথা কঁপায়। হেরম্ব বুঝিতে পারিল সে অন্ধ । অন্ধ ! গত রাত্রির জ্যোৎস্নার চেয়ে বিস্ময়কর আলো চারিদিকে খেলা করিতেছে, হাত বাড়াইলে দু'চোখের একটি জীবন্ত তৃপ্তিকে স্পর্শ করিতে পারে তবু বেচারা অন্ধ! হেরম্ব সভয়ে দেখিল, বৃদ্ধের চোখের পাতার তলে চোখ নাই, আছে চামড়া ছাড়ানো তাজা মাংসের রক্তাক্ত বীভৎসতা ! অদৃশ্য জগতের শব্দকে অনুসরণ করিয়া দৃষ্টিহীন গহবর দুটি এদিক ওদিক ফিরিতে লাগিল, হেরম্ব অভিভূতের মত তাকাইয়া রহিল। ër R