পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটু ভাব কর, সামাজিক জীবনটা একটু আমায় ভোগ করতে দাও তোমার সঙ্গে। তুমি তো জানো মমু, কখনো কোন বিষয়ে তোমার ওপর আমি জোর খাটাব না ? এ জীবন আমার সইছে না। আমার মুখ চেয়ে এইটুকু তুমি করা আমার জন্যে ।” মমতা ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। “এইটুকু !’ কঠিন বিদ্রুপের তীব্ৰ তীক্ষু হাসি ঝলকে ওঠে তার মুখে। “আমার সব কিছু ছেটে ফেলতে হবে।-সে হল তুচ্ছ সামান্য এইটুকু ! দশজন হালকা অপদাৰ্থ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে, পাটি দিয়ে, গান বাজনা গল্পগুজব পরচর্চা করে আর তোমাদের ফ্যামিলি পলিটিক্স নিয়ে মেতে থেকে জীবন কাটালে তুমি আমার ভালবাসার প্রমাণ পাবে ? তুমি তো ভারি সন্তা ভালবাস চাও । এ-রকম ভালবাসা দেবার মত মেয়ের তো অভাব ছিল না। হীরেন ? ও-রকম একজনকে বেছে নিলে না কেন ? উথলে ওঠা ভালবাসায় তোমায় সে ভাসিয়ে দিত।” মমতা কেঁদে ফেলে। হীরেন স্তব্ধ হয়ে থাকে। তিন ঝুমুরিয়ার ক্রোশ দুই তফাতে একখানি বিচ্ছিন্ন শালবন। এটি ছাড়া এ অঞ্চলে আশেপাশে শালবন একরকম নেই। পথের ধারে মাঠে প্ৰান্তরে এখানে ওখানে এলোমেলোভাবে ছড়ানো গাছ চোখে পড়ে, বড়জোর কোথাও উচু ডাঙ্গায় ছোট একটি চাপড়া, বন না বলে যাকে শালের বাগান বলা চলে। চারিদিকে বহুদূর বিস্তৃত ক্ষেত্র ও ফাকা মাঠের মধ্যে এই ছোট শালবনটি যেন পৃথিবীর গায়ে নয়নাভিরাম প্ৰাগৈতিহাসিক জন্মচিহ্নের মত । বন কাটার কাজ চলছে কিছুদিন ধরে। উত্তরের খানিকটা অংশ ইতিমধ্যে লুপ্ত হয়ে গেছে। ডালপালা ছাটা ডগা কাটা সিধা লম্বা দৈত্য-দানবের লাঠির মত শত শত শালের ভূপ জিমেছে একস্থানে, শত শত গাছ সবুজ শাখাপত্ৰ নিয়ে হুমডি খেয়ে ছড়িয়ে পড়ে আছে মাটিতে। সারাদিন গাছ কাটা, ডালপালা ছাটা, জালানি কাঠের টুকরোগুলি কাটা, আগে কাটা আধশুকনো কাণ্ডগুলি দুটি লরী। আর অনেকগুলি গরুর গাড়ীতে বোঝাই দেওয়ার কাজ চলেছে অবিরাম, উধ্বশ্বাসে । আধ মাইল তফাতে পাকা রান্তা, এদিকে রেল ষ্টেশন থেকে ওদিকে br○