পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী চলে গেছে সাগরতীরের বালিয়াডি বহুল সহরে। মাঠ ও ফসলভরা ক্ষেতের বুকের উপর দিয়ে ওই রাস্তা পৰ্যন্ত লৱী ও গাড়ী চলাচলের একটা পথ গড়ে উঠেছে দু’টি সমান্তরাল গভীর রেখায়। দরকার মত ক্ষেতের আলি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাকার দাগের সঙ্কীর্ণত আঁকা বঁকা গতি দেখে অনুমান করা যায় ক্ষেতের ফসল যতদূব সম্ভৱ কম নষ্ট করার দিকে নিয়ামকদের নজর আছে খানিকটা । গাছ কেটে চালান দেওয়ার কাজে সাধারণতঃ ধীরে সুস্থে শিথিল গতিতেই চলে। কিন্তু গোড়ায় মজুরের অভাবে এবং কণ্টাক্টর হেরম্ব চক্রবর্তী অন্যত্র বিশেষ ব্যস্ত থাকায় এতদিন কাজ ভাল এগোয় নি। খাতে লেখা হিসাব মত সময় গুরুতর রকম সংক্ষিপ্ত হয়ে দাডিয়েছে, সময় কিছু বাড়িয়ে নেবার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে, তাই এত তাড়াহুড়ো । গাছগুলি কাটার পর ভাল করে শুকোলে রস মরে হাল্কা হয়, গাড়ীতে বেশী বোঝা চাপানো চলে। কিন্তু সে সময়ও নেই-মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধান রাখা হয়েছে। গাছ কাটা আব্ব চালান দেওয়ার মধ্যে। চেষ্টা চলেছে আরও গোটা দুই লরী ও কতগুলি গরুর গাড়ী সংগ্রহের । অগ্রহায়ণের সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দূরে তাকালে দেখা যায় অস্পষ্ট কুয়াশা রূপ নিচ্ছে। আজকের মত কাজ শেষ। স্থানীয় মজুররা ঝুমুরিয়া, নিতাইপুর, মহিষালি প্ৰভৃতি কাছাকাছি গায়ে তাদের কুঁড়ের উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েছে। কয়েকজন বিহারী মজুৱও গায়ের দিকে চলেছে। এরা গায়ের লোক নয়, ঘর-টান এদের নেই, কিন্তু বনের ধারে এখানে বিনা ভাড়ায় অস্থায়ী কুটির তৈরী করে দিতে চাইলেও তারা এখানে রাত কাটাতে রাজী নয়, লোক্যালয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে তারা বাস করতে ভালবাসে, এক বাড়ীতে নয়তো এক ঘরে যতজন মিলে একসঙ্গে থাকা সম্ভব। মেয়েপুরুষ সঁওতাল মজুররাই শুধু এখানে অস্থায়ী ঘর-সংসার পেতে বসেছে। ডালপালা লতাপাত দিয়ে নিজেরাই তারা তিন চার হাত উচু ছোট ছোট কুঁড়ে বেঁধে নিয়েছে, ঠিক যেন বয়স্ক শিশুদের খেলার ঘর। ফাকায় মাটির হাঁড়িতে ভাত রাধে, বাঁশের চোঙায় তেল রাখে, পুরু কাগজের মত ঘন মোটা কাপড় কোমরে জড়ায় আর পিঠে ছেলে বাধার বা গায়ে দেবার চাদর করে, কাঠের চিরুণীতে চুল আঁচড়ায়, খোপায় ফুল গোজে আর বাবরিতে লাল কাপড়ের ফালি জড়ায়, শালপাতার মোটা বিড়ি বানিয়ে se