পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ከምቴዎ किरैिकि ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে বোকা মনে করার লজায় করুণভাবে একটু হেসে জ্যোতিষার্ণব নিজে নিজেই কয়েকবার মাথা নাড়ে। স্বর্গে যদি গিয়েও থাকে তার ছেলেমেয়ের মা, এতদিনে সেখানে পৌছে গেছে। অতীত ঘটনার সঙ্গে কি সম্পর্ক টিকটিকির যে তার ছেলেমেয়ের মা স্বৰ্গে গেছে সে একথা বললে সঙ্গে সঙ্গে সায় না দিয়ে টিকটিকি থাকতে পারবে না ? তাছাড়া, স্বৰ্গে যাওয়া না যাওয়া ত জীবনের ঘটনা নয় মানুষের। মরে মানুষ যে-স্বৰ্গে যায়, ইহলোকে কি সে-স্বৰ্গ আছে ? স্বৰ্গই নেই ইহলোকে । মনে মনে এত গভীর ও জটিল যুক্তিতর্ক নাড়াচাড করেও কিন্তু সন্দেহ যায় না। তার ছেলেমেয়ের মা স্বর্গে যায় বা যায়নি বলেও ত চুপ করে থাকতে পারে ত্রিকালীদর্শী টিকটিকিগুলি ? স্বৰ্গে গিয়ে থাকলে অন্যগুলি না হোক, যে টিকটিকিট তার ছেলেমেয়ের মার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছিল, সেটা অন্ততঃ একবার ডেকে উঠত। হোক না অতটুকু জীব, একবার যে অতখানি জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছে তার কি এতটুকু কাণ্ডজ্ঞান নেই ? জ্যোতিষার্ণবের বিপদ এই সে জানে তার ছেলেমেয়ের মার স্বৰ্গে যাওয়া নিষেধ। অবিবাহিতা বৌদের জন্য স্বৰ্গ নয়। কিন্তু কুমারী জীবন থেকে একজন পুরুষের সঙ্গে যারা জীবন কাটিয়ে দেয়, তাদের জন্যও কি স্বর্গে যাওয়ার কড়া ব্যবস্থা একটু শিথিল হয় না ? তার ছেলেমেয়ের মার পারলৌকিক জীবন সম্বন্ধে এইটুকুই আশা ভরসা জ্যোতিষার্ণবের। মার জন্য ছোট ছেলেটা ককায় । মেয়েটা বোবা-কান্না কঁাদে। বড় ছেলেটা কঁদে আর জিজ্ঞাসা করে, “মা কোথায় গেছে। বাবা ? জিজ্ঞাসা করে গণনালয়ে, তিনজন ক্লায়েণ্টের সামনে । জ্যোতিষার্ণব দেয়ালে টাঙােন যোগিনীচক্রের পাশে নিম্পন্দ টিকটিকিটার দিকে একবার তাকিয়েই উঠে দাঁড়ায়। ক্লায়েণ্টদের সবিনয়ে বলে, “একটু বস্থান, আসছি।” ব’লে ছেলেকে নিয়ে অন্দরে শোবার ঘরে ঢুকে দেয়ালে আর সিলিং-এ ব্যাকুল দৃষ্টিতে খুজে বেড়ায় তার টিকটিকিকে। সে দিন ঘরে যা কিছু ছিল আজও তার সবই আছে, কেবল নেই শৃঙ্খলা আর সেই টিকটিকিট। শৃঙ্খলা সত্যই নেই, শৃঙ্খলা লুকিয়ে থাকে না, কিন্তু টিকটিকি ত ফাকে ফোকরে জিনিসপত্রের আড়ালে অনায়াসে লুকিয়ে থাকতে পারে, অতটুকু জীব টিকটিকি! একটু আশ্বস্ত হয়। জ্যোতিষার্ণব । ছেলেকে বলে, “কি বলছিলি তুই খোকা ?” বাপের কোলে উঠে ছেলের মন এতক্ষণে শান্ত হয়েছে। o afiș actriţa ●