পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একতলায় বারান্দায় নেমে দেখা যায় ৪ বারান্দায় মাদুরে বসে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ইতির মা ঘুমুচ্ছে, পাশে পড়ে আছে বছর তিনেকের একটা উলঙ্গ ছেলে, সর্বাঙ্গে তার অনেকগুলি পাঁচড়া। বারান্দার অপর প্রান্তে এটো বাসন পড়ে আছে । ছেলেটার। পাচড়ার রস ভাল না লাগায় থেকে থেকে পাঁচড়া ত্যাগ করে কয়েকটা মাছি উড়ে যাচ্ছে এটা বাসনে, আর উচ্ছিষ্ট ভাল না লাগায় থেকে থেকে কয়েকটা মাছি এটো বাসন ত্যাগ করে উড়ে এসে বসছে ছেলেটার। পাচড়ায়। ইতির মার ঘুম ঠিক ঘুম নয়, চোখ বুজে থাকা। মটকা মেরে নয়, শ্ৰাস্তিতে আর দুর্বলতায় । চোখ মেলে ইতির মা বলে, ‘ইতি এলি ? বলে মানবের মুখের দিকে চেয়ে ইতির মা বলে, “সকাল বেলা এক কুঁজে জল৷ নিয়ে গেলেন, ফুরিয়ে গেছে ?-ইতি, যা ত মা, কুঁজোয় জল ভরে দিয়ে আয়। ওসব কি পুরুষ মানুষের কাজ।” মানব বলে, “সিড়ি ভাঙতে ইতির কষ্ট হয়, আমি নিয়ে যেতে পারব।” ইতির মা একথা শুনতে পায় না। মেয়ের পাদমূলে চোখ রেখে বলে, “তোর গায়ে রক্ত কিসের লো ইতি ?” ইতি নিশ্চিন্তভাবে বলল, “পাচড়া চুলকে ফেলেছি।” মানব বলে, “তোমার পাঁচড়া হয়েছে ইতি ? প্রশ্ন শোনবা মাত্র ইতি বিনা, ভূমিকায় ক্ষেপে যায়। আর্তনাদ করার মত বলতে আরম্ভ করে, “হ্যা হয়েছে, একশ’টা হয়েছে। কি করবে। তুমি ? ঘেন্না করবে ? করগে যাও, কে তোমার ঘেন্নাকে কেয়ার করে ? দেখছি না ভাই-এর গায়ে পাচড়া, জাননা ভাইকে আমি কোলে নিই ? পাচড়া হবে না। ত কি হবে আমার ? তাড়াতাড়ি কুঁজোটা নামিয়ে রাখতে সেটা গড়িয়ে উঠোনে পড়ে ভেঙে যায়। মানব সেদিকে চেয়েও দেখে না । “ঘরে যাও ইতি, সুধাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।” বলে একেবারে তিন চারটি ধাপ ডিঙিয়ে মহামানবের মত মানব উপরে উঠতে আরম্ভ করে। • মাসিক কন্দোপাধ্যায়েয় ও