পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8br তারপর আবার তার মনটা কেমন করিতে লাগিল একটা অজানা কিছুর জন্য। মহেন্দ্রের আলিঙ্গনে শিহরণ জাগার বদলে দম আটকাইয়া আসিতে লাগিল। ধীরে ধীরে তার মনে হইতে লাগিল, রসিক নামে যে রোগী লম্বা ভীরু ছেলেটা মাঝে মাঝে আসে, তার কাছে কি মন কেমন করার ওষুধ আছে ? সাধন বৈরাগী নামে যে রূপবান পুরুষটা তার মন ভুলানোর চেষ্টায় নাওয়া-খাওয়া ছাড়িয়াছে সে কি তাকে দিতে পরিবেসে যা চায় ? একদিন মাঝরাত্রে সুভদ্রা ধরা পড়িয়া গেল। রাশি রাশি মেঘে ঢাকা আকাশ হইতে বৃষ্টি পড়িতেছিল। টিপি টিপি, মোলায়েম একটু ঠাণ্ডা পড়িয়াছিল। সারাদিনের গা-জালানো গরমের পর, একেবারে অচেতন হইয়া ঘুমানো উচিত ছিল মহেন্দ্ৰেয়। আগের রাত্রে গরমে সিদ্ধ হইতে হইতেও সে মরার মত ঘুমাইতেছিল, সুভদ্রা কখন উঠিয়া গিয়া কখন বিছানায় ফিরিয়া । আসিয়াছিল। কিছুই টের পায় নাই। দু’চারটি রাত্রি বাদ দিয়া তার আগের আরও পাঁচ সাতটি রাত্রেও টের পায় নাই। আজ যে কেন তার ঘুম ভাঙিয়া 6छ । হয়ত জাগিয়াই ছিল, কে বলিতে পারে। একবার ঘুমাইলে মহেন্দ্রের ঘুম সহজে ভাঙে না। উঠিয়া যাওয়ার সময় সুভদ্ৰা আস্তে তার গায়ে একবার ঠেলাও দিয়াছিল। গায়ে ঠেলা দেওয়ায় যে জাগে নাই কয়েক মিনিট পরে আপনা হইতে তার ঘুম ত ভাঙিবার কথা নয়। রসিক গায়ে জড়াইয়া আসিয়াছিল ছেড়া একটা সস্তা কম্বল। ভয় পাওয়ার অভ্যাস থাকিলে কম্বল জড়ানো সেই চেনা মানুষটিকে দেখিয়া সুভদ্ৰা হয়ত মুছ। যাইত। তার বদলে বর্বা-বাদলের রাত্রে ভালবাসিয়া জালাতন করিতে আসিয়াছে বলিয়া রসিকের হাত ধরিয়া হিড়হিড় করিয়া তাকে সে টানিয়া নিয়া গেল উঠানের দক্ষিণে, ধানের মরাইটার গা-ঘেষা ছোট আটচালার নিচে । আটচালার অর্ধেকটা ভরিয়া ছিল চ্যালানো আম কাঠে আর বাকী অর্ধেকট ভরিয়া ছিল চাষের যন্ত্রপাতি আর ভাঙা গরুর গাড়ির চাকা হইতে আরম্ভ করিয়া দুমড়ানো কেনেস্তারা পর্যন্ত রকমারি জঞ্জালে। তার মধ্যে একটু স্থান করিয়া রসিকের গায়ের কম্বল বিছাইয়া তারা বসিয়াছিল। তারপর রসিকের বুকে মাথা রাখিয়া ভৎসনার সুরে সুভদ্ৰা সবে বলিয়াছে, ‘আজ আবার কেন এলে শুনি মুখপোড়া? o six yety o