পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSV ভিক্ষুক ‘হ্যা, হঁ্যা, জানি, তোমার ছেলের কলেরা, মেয়ের বসন্ত, বৌয়ের টাইফয়েডভদ্রলোকের ছেলে তুমি, লজ্জা করে না তোমার ? একটা পয়সা বাহির করিয়া যাদবের গায়ের উপর ছুড়িয়া দিয়া তিনি চলিয়া যান, যাদব থ” বনিয়া দাড়াইয়া থাকে। মনে তার সত্যই বড় আঘাত লাগিয়াছে। অনেকদিন হইতেই কেমন একটা বিশ্বাস তার মনে জমা করা আছে যে মানুষের দয়া আর সহানুভূতির উপর তার জন্মগত অধিকার। এই অধিকারের দাবিতে সাহায্য আর সহানুভূতি সে চাহিয়াছে অনেকবার এবং অনেকের কাছে। আত্মীয়ের কাছে সাহায্য আর সহানুভূতি না পাইয়া তার যেমন অপমান বোধ হইত, এখন এই লোকটির ব্যবহারে নিজেকে তার চেয়েও বেশী অপমানিত মনে হইতে থাকে। তার কথায় বিশ্বাস না হোক, তাকে কিছু দিতে ইচ্ছা না হোক, এভাবে খোচা দিয়া একটা পয়সা গায়ের উপর ছুড়িয়া মারিয়া অপমান করার কি দরকার ছিল ? একটা টাকা, বড় জোর একটা আধুলি ছাড়িয়া মারিলেও বরং কথা ছিল। কি অভদ্র মানুষটা, কি নিষ্ঠুর ! “আপনার ছেলের কলেরা হয়েছে ?” যাদব চাহিয়া দ্যাখে, মাঝবয়সী একটি লোক, মুখে সাতদিনের খোচা খোঁচা দাড়ি, পরনেও সাবান-কাচা মোটা কাপড়ের শাট, আধময়লা পায়ে ছেড়া তালি মারা পাম্পাসু। ভদ্রলোকের চোখ দুটি ছলছল করিতেছে দেখিয়াও যাদবের বিশেষ ভরসা হয় না, এরকম লোকের কাছে কি আশা করা যায়, এরকম লোককে দুঃখের কাহিনী শুনাইয়া লাভ কি ! মাথা হেলাইয়া সায় দিয়া সে আগাইয়া যায় । লোকটি কিন্তু নাছোড়বান্দা, সঙ্গে সঙ্গে চলিতে আরম্ভ করিয়া বলে, “আমার মেজো মেয়েটা আর-রোববার কলেরায় কাবার হয়ে গেছে। এ শহরে মানুষ থাকে মশায়, শুধু রোগ, শুধু রোগ!” একটু থামিয়া সে নিজের শোক সামলাইয়া নেয়, তারপর বলে, “সঙ্গে ত আমার কিছু নেই বিশেষ, সঙ্গে যদি একটু আসেন আমার বাড়ি পৰ্যন্ত, আপনার ছেলের চিকিৎসার জন্য-” বাড়ি বেশী দূরে নয়, কাছেই একটা গলির মধ্যে। মেজো মেয়ের কলেরায় মরণের বিবরণ দিতে দিতে বাড়ির কাছে পৌছিয়াই ভদ্রলোক একেবারে কঁাদিয়া ফেলে। চোখ মুছিতে মুছিতে বাড়ির মধ্যে চলিয়া যায়। কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হইতে থাকে যাদবের, সহজ উপায়ে রোজগারের চেষ্টা করিতে গিয়া প্ৰত্যেকবার যে সঙ্কোচ আর লজ্জার অনুভূতিটা মনের মধ্যে শুয়ো পোকার মত O artfär 3Gotta o