পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

थ ܓ ܗ ܓ উধ্বশ্বাসে দৌড় দেয় দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে, এদো ডোবার পাশ দিয়ে পড়ি-মরি ভাবে ছুটে অদৃশ্য হয়ে যায় আম-বাগানে। মুকুল আর বটুক তার পিছু তিনবার হাক দেয় সোনা মণ্ডল গলা চড়িয়ে চড়িয়ে, মুকুল আর বটুক অনিচ্ছায় থেমে ফিরে আসে । সোনালী তাজা রোদ উঠে গেছে ততক্ষণে। খানিক দূরে সরকারী সড়ক দিয়ে আওয়াজ তুলে ধুলো উড়িয়ে নন্দীপুরের বোঝাই বাসটা চলে গেল। আজ দেরি করেছে, সদর থেকে ভোর চারটায় ছেড়ে আরও আগে গা-ঘেঁষে বাসটা বেরিয়ে যায়, ওঠা-নমার যাত্রী না থাকলে থামেও না । বাসটা যেন থেমেছিল এদিকে রাস্তাটা যেখানে বড়পাড়ার ঘর-বাড়ির আড়ালে। টিনের ছোট বাক্সটি হাতে ঝুলিয়ে উল্লাসকে আসতে দেখা যায়। মামলাবাজি ব্যবসা উল্লাসের, অনেক উকিল মোক্তারের চেয়ে তার অনেক বেশী উপার্জন ! সম্প্রতি এগারজন চাষীর নামে একদিনে হালদার সতরটা মামলা শুরু করেছে, তাই নিয়ে বড়ই ব্যস্ত হয়ে আছে, গা আর সদর করে বেড়াচ্ছে হরদম। জমােয়ত দেখে সে তফাতেই থমকে দাড়ায়। হালদারের বাড়ির সামনে ভিড় জমাটা শুভ চিহ্ন নয়। দিনকাল সুবিধে নয়। কুক্ষণে অসময়ে বাস থেকে নেমেছিল উল্লাস, ক্ষুব্ধ ব্যাহত মানুষগুলির সামনে এসে পড়েছিল, তার বিরুদ্ধে যাদের বুকে বহুদিনের জমা করা পুঞ্জ পুঞ্জ ঘূণার আগুন ! সোনা মণ্ডলের গালে চড় মেরেও কুণ্ডু, ছুটে পালিয়েই বেঁচে গিয়েছে, কারণ মানুষটা সে যেমন হোক সে তাদেরই মানুষ, সঙ্গে এসেছিল একই উদ্দেশ্যে, তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সঞ্চিত ছিল না যে হঠাৎ কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে একটা দোষ করলেই বারুদের মত ফেটে পড়বে। সবাই জানে, ওবেলাই হয়ত দেখা যাবে সোনা মণ্ডলের দাওয়ায় বসে সে কলকে ফুকছে, মাপ চেয়ে মিটিয়ে নিয়েছে ব্যাপারটা। কিন্তু উল্লাসের ওপর বড় রাগ তাদের, বহুদিন ধরে মনগুলি জর্জরিত অভিশাপ হয়ে আছে। হঠাৎ গর্জন করে ওঠে আড়াইশ’ লোক, তাতে তলিয়ে যায় সোনা মণ্ডল আর অন্য কয়েকজন ঠাণ্ডা মাথা মানুষের প্রতিবাদ । চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যায় ফন্দি-ফিকিরের জাল বোন, মানুষের পর মানুষকে পথে নামানোর অধ্যবসায়, শিশির-ভেজা ঘাসে চিত হয়ে উল্লাসের দৃষ্টিহীন-পলকহীন চোখ মেলা থাকে আকাশের দিকে। বাতাসে উড়ে যায় ছিড়ে কুটিকুটি করা দলিলপত্র, নোটের তাড়াটা পৰ্যন্ত কেউ ছোয় না, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। ০ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৫০