পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

፵፬ማ Ret গিয়ে বঁায়ে মোড় ঘুরেছিল অন্য রাস্তায়, হাজির হয়েছিল তিন ক্রোশ তফাতে নদীর ধারে পলাশডাঙায় । ধান-চাল চােরা-চালানের এখানে একটা ধাটি আছে কুণ্ডুর। জানে অনেকেই, একরকম প্ৰকাশ্যভাবেই চাের-চালান চলে। গোপনতা শুধু এতটুকু যে সরকারীভাবে ব্যাপারটা স্বীকৃত হয় না। টিনের চালা, সিমেণ্ট করা মেঝে। অত্যন্ত অবহেলার সঙ্গে ধানগুলি মেঝেতে ছড়িয়ে ঢেলে ফেলা হয়। এক কোণে অল্প কিছু চাল পড়েছিল মেঝেতে, চাল ও তুষের ওঁড়ো। বোঝা যায় গুদামে চাল জমা হয়েছিল, সম্প্রতি সরানো হয়েছে, এখনো মেঝে বাট দেওয়াও হয়নি। অলস স্তিমিত চোখে তাকায় নারায়ণ, শস্যের গন্ধ তার নাকে লাগে না, নাক ভেঁাতা হয়ে গেছে । ছোট ঝাটাটি হাতে নিয়ে সাগ্ৰহ প্ৰতীক্ষায় দাড়িয়ে আছে রাজু, মা ও মেয়ে। ধান গুদাম ঘরে তুলতে যে ক’টি দানা পথে মাটিতে ঝরে পড়বে, ঝোঁটিয়ে ওরা কুড়িয়ে নেবে। খেয়ে বঁচবোঁ । ধান যারা আগে গুদামে তুলেছিল তাদের একজন বোঝা থেকে কিছু ধান হাত বাড়িয়ে মাটিতে ছড়িয়ে দেয়, আড় চোখে চেয়ে হাসে। রাজু তার শীর্ণ মুখে খুশীর ভাব ফোটাতে চেষ্টা করে। মাটিতে ঝরে পড়া শস্যকণ্যা কুড়িয়ে নেবার একচেটিয়া অধিকার দিয়েই তাকে কিনতে পেরেছে নারায়ণ । তার ওপর এই দয়া, খেলার ছলে আরও দুটি বেশী শস্য ছিটিয়ে দেওয়া ! ছোট ঘাট, খেয়া পারাপার হয়, কয়েকটি নৌকা আসে যায়, কয়েকটি ঘাটে বাধা থাকে, মেয়ে-পুরুষ নাইতে বা জল নিতে আসে। সকালে ধান-চালের গুদামটির গায়ে লাগানো কেরোসিনের দোকানের বারানদায় চেয়ারে বসে নারায়ণ বিমোয়, বান্দা মেপে মেপে কেরোসিন বেচে । তেল দিতে যেন হাত ওঠে না তার, পয়সা নিয়ে দু’ফোটা তেলও যেন দেয় অনিচ্ছায়। সবাই পায় না তেল, পাওনা তেলের দশভাগের এক ভাগও পাবে না, তেল ফুরিয়ে যায় ! এটা লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান, দশ টিনে দু’টিন এমনিভাবে বাধা দরে বেচে ঠাট বজায় রাখতে হয়। বাকীটা নিবিবাদে বেচা যায় চোরা দরে । নৌকার মাঝি এসে দাড়ায়। হাই তুলে নারায়ণ বলে, দেশপুরের কলে পেঁৗছে দিবি ধান । মাঝি বলে, দিনে বোঝাই দিতে বাবু বারণ করেছে না ? o *-fifts o