পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবেক აბაზ পড়িতে চায় না মানুষের। অশ্বিনীর সোনার ঘড়ি কোথায় ছিল, কে নিয়াছে, কে বলিতে পরিবে! তারপর ঘড়িটা অবশ্য এক সময় ঘনশ্যামের পকেটে চলিয়া গেল। বুকের ধড়ফড়ানি ও হাতপায়ের কঁপুনি থামিয়া তখন নিজেকে তার অসুস্থ, দুর্বল মনে হইতেছে। হাঁটু দু’টি যেন অবশ হইয়া গিয়াছে। পেটের ভিতর কিসে জোরে টানিয়া ধরিয়াছে আর সেই টানে মুখের চামড়া পর্যন্ত সিরসির করিতেছে। বৈঠকখানায় পা দিয়াই ঘনশ্যাম থমকিয়া দাড়াইয়া পড়িল। অশ্বিনীর পুরনো চাকর পশুপতি উপস্থিত ভদ্রলোকদের চা পরিবেশন করিতেছে। ঘড়িটা পকেটে রাখিতে সে যে এতক্ষণ ইতস্ততঃ করিয়াছে, ঘনশ্যামের ধারণা ছিল না। হিসাবে একটা ভুল হইয়া গেল। পশুপতি মনে রাখিবো। এ ঘর হইতে তার বাহির হওয়া, তার ঠমক, চমক, শুকনো মুখ, কিছুই সে ভুলিবে না। “কেমন আছেন ঘোনোসংখ্যামবাৰু? চা দিই? “দাও একটু।” ধোপদুরন্ত ফরসা ধুতি ও শার্ট, পায়ে স্যাণ্ডেল। তার চেয়ে পশুপতিকে ঢের বেশী ভদ্রলোকের মত দেখাইতেছে। ঘনশ্যামের শুধু এইটুকু সাত্বনা যে আসলে পশুপতি চোর। অশ্বিনী নিজেই অনেকবার বলিয়াছে, সে এক নম্বরের চোর। কিন্তু কি প্রশ্ৰয় বড়লোকের এই পেয়ারের চোর-চাকরের ! এক কাপ চ দেওয়ার সঙ্গে বড়লোক বন্ধুর চাকর যে কতখানি অপমান পরিবেশন করিতে পারে খেয়াল করিয়া ঘনশ্যামের গায়ে যেন জ্বালা ধরিয়া গেল। আজ কিন্তু প্ৰথম নয় । পশুপতি তাকে কোনদিন খাতির করে না, একটা অদ্ভুত মার্জিত অবহেলার সঙ্গে তাকে শুধু সহ করিয়া যায়। এ বাড়িতে আসিলে অশ্বিনীর ব্যবহারেই ঘনশ্যামকে এত বেশী মরণ কামনা করিতে হয় যে, পশুপতির ব্যবহার সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার অবসর সে পায় না। চায়ে চুমুক দিতে জিব পুড়াইয়া পশুপতির বাঁকা হাসি দেখিতে দেখিতে আজি সব মনে পড়িতে লাগিল । মনের মধ্যে তীব্ৰ জালা-ভর অনুযোগ পাক দিয়া উঠিতে লাগিল অশ্বিনীর বিরুদ্ধে। অসহ্য অভিমানে চোখ ফাটিয়া যেন কান্না আসিবে। বন্ধু একটা ঘড়ি চুরি করিয়াছে জানিতে পারিলে পুলিসে না দিক জীবনে আশ্বিনী তার মুখ দেখিবে না। সন্দেহ নাই। অথচ প্রথার মত নিয়মিতভাবে যে চুরি করিতেছে, সেই চাকরের কত আদর তার কাছে! e -fiáfise o