পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRV মানিক রচনাসমগ্র একটা বিশেষ কথা কৈলাস বুঝেছে কিনা সে বিষয়ে তার একটু খটকা থেকে যায়। কৈলাস নিজেই কথাটা তুলে তাকে নিশ্চিস্ত করে। বলে, দ্যাখো, থানার ঘড়িতে দশটা—এগারোটা বাজিয়ে তোমার কাছে আসতে পারি। আমরা ऊष्ठ भन श: याद नीं। হ্রদয়ে তোলপাড় ওঠে লক্ষ্মীর। টের পায় সর্বাঙ্গ তার ঘামতে আরম্ভ করেছে। কৈলাস বলে, লুকিয়ে এলাম, শ্যাল কুকুরও টের পেল না। ভগবান যদি থাকেনও তবু তার দুটি চোেখ কানা ! কিন্তু একটা দিন দুটাে দিন এলেই কি মোরা ধন্যি হয়ে যাব, সাধ মিটে যাবে ? মদের স্বাদ পেলে নেশা চড়তে থাকে, মোদের হবে। আরও বিষম নেশা। জানাজানি হয়ে যাবেই। লক্ষ্মীরা যেন ঘাম দিয়ে জুর ছাড়ে। কৈলাস বলে, সবাইকে ডোন্ট কেয়ার করে তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধা। আর রাতের বেলা লুকিয়ে আসা এককথা। তার চেয়ে তুমি আমি বুক বাঁধি এসো। মহিমাটা জেলে পচিছে, গাদাকে তাই বুক বাঁধতে হয়েছে। সারা দেশের লোকের সঙ্গে আমি জেলের চেয়ে বড়ো ফাঁদে আটক পড়েছি ভেবে তুমি বুক বাঁধবে। কপালের ক্ষতচিহ্নটা আঙুলে টিপে লক্ষ্মী বলে, আর তুমি ? কৈলাস বলে, আমি ? আমার বুক বাঁধাই আছে ! পুরুষ মানুষ, তাই তার কথা আলাদা। কৈলাসকে যদি কেউ বলে দিত। এ দেশে বুদ্ধদেব থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শুধু পুরুষরাই আদর্শের জন্য কামিনী-কাঞ্চন ত্যাগ করার অধিকার পেয়ে এসেছে,-এ ব্যাপারটার সঙ্গে তার বুক বাঁধাই আছে বলার ধরনের বডড বেশি মিল-তার ফুলে ওঠা বুকটা নিশ্চয় চুপসে যেত খানিকটা ! গাঁদাকে পাশে নিয়ে লক্ষ্মী রাতে শান্ত হয়ে ঘুমায়, ছেলেমানুষ গাঁদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘুমায়। সে যেন প্রমাণ দেয় যে সংযম না ছাঁই, সংযম মানেই বঞ্চিত বিকারগ্রস্ত মানুষের অসংযমের তাড়নার সঙ্গে লড়াই করে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া-সুস্থ স্বাভাবিক জীবন হলে মানুষের কাছে সংযম কথাটার মানেই দাঁড়িয়ে যেত। অন্যরকম। ওই রকম জীবনের জন্য মানুষের বড়ো লড়াইকে শুধু ঠিকমতো খাতির করেই নিজের জ্বালায় ছটফটানোর বদলে মানুষ দিব্যি অচেতন হয়ে ঘুমোতে পারে ! মন শাস্ত হয় না। কৈলাসের। লন্ঠনের আলোয় তার চোখে পড়ে বেড়ায় টাঙানো বাংলা ক্যালেন্ডারের রঙিন ছবিটার দিকে-বটতলার একটি জনপ্রিয় ছবি ছাপানো হয়েছে-ঘুমন্তু বউকে ছেড়ে রাত্রে নিমাইয়ের গৃহত্যাগ। খাটে ঘুমস্ত বিষ্ণুপ্রিয়া। এ ছবি দেখে কৈলাসের শুধু মনে হত, পাঁচ ছ-শো বছর আগে একালের তীতের শাড়ি বিষ্ণুপ্রিয়ার দেহে কী করে উঠল, একালের ঢং-এ শাড়ি পরাই বা তাকে কে শেখাল, এ রকম সাজসজ্জা করে তখনকার বউদের বিছানায় শূয়ে ঘুমানো ईीलि छेिव्न किना। ছবিটা আজ তাকে মনে পড়িয়ে দেয়। অন্য কথা। চৈতন্যদেবের আদর্শ কী ছিল আর কেমন ছিল সে কথা নয়, প্ৰায় তারই মতো বউ না হলেও বউয়ের বাড়া লক্ষ্মীকে সে যে আজ আদর্শের জন্য ত্যাগ করেছে, এ কথাও নয়। সন্ন্যাসী হওয়ার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছিল চৈতন্যেরা। দেশ প্রস্তুত ছিল, সময় ছিল উপযুক্ত, তার শিক্ষায় বন্যার মতো ভেসে গিয়েছিল দেশ। আজ এত প্রয়োজন তবু নতুন ভাবের বন্যা আসে না। ୋ cନg ? প্রয়োজন চরমে উঠেছে কিন্তু দেশ কী ? প্ৰস্তুত নয় ? বন্যা এনে দেবার মানুষ নেই ?