পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইতিকথার পরের কথা ֆ8 Ղ তাই বটে। এত পয়সা খরচ করে এত শিক্ষা পেয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত নিজে সে একটি পয়সা রোজগার করেনি। এইবার সত্যিসত্যি যাচাই হবে তাব শিক্ষার মূল্য। ওদিকে অনেক বেলায় ঘুম ভেঙে জগদীশের মনে হয়, হায় ! তাকে দিয়েই শেষ পর্যন্ত তবে ফাড়াটা ঘটানো হল শুভর। দৈব সত্যই সর্বশক্তিমান ! হোটেলে কয়েকটা দিন কাটে শুভর। তাব মধ্যেই জীবনে এবার সে প্রথম ভালোভাবে উপলব্ধি করে যে জগতে তার আত্মীয়বন্ধু কত আছে। একেবারে তাক লেগে যাবাব মতোই চমকপ্ৰদ মনে হয় ব্যাপারটা তার কাছে। তার হােটেলের ঘরে দু-একজনের পদাৰ্পণ থেকে শুবু হয়। আর কয়েক দিনের মধ্যে ঘরখানায় যেন বন্যা বয়ে যায় আত্মীয়কুটুম্ব ও বন্ধুবান্ধবের-পিতৃপক্ষীয়, মাতৃপক্ষীয় এবং বর্তমানে একটু অনিশ্চিত হয়ে গেলেও অনেকদিনের সুনিশ্চিত হবু শ্বশুরপক্ষীয় ! ছোটো বড়ো ডাক্তার ব্যাবিস্টার ডিরেক্টর অফিসার অধ্যাপক রাজা ও জমিদার ! তার নিজের চেনা মানুষ তো আছেই। তার বাপ তাকে দূর দূব করে তাড়িয়ে দিয়েছে, এ একটা অতি আকস্মিক ও অভাবনীয় ঘটনা তার জীবনে। নিকট ও দূরের মানুষের আত্মীয়তারও তেমনি আকস্মিক ও অভাবনীয় বন্যা এসে যেন তার জীবন থেকে ধুযে মুছে নিয়ে যাবে ওই ঘটনা এবং সেই সঙ্গে একেবারে মোড় ঘুরিয়ে দেবে তার জীবনের । দিন দুই সে হােটেলের ঘর ছেড়ে বেরোযিনি। অনেক কথা নতুন করে ভাবা দরকার তাই সারাদিন শুধু ভেবেছে। সারাদিন বসে বসে একভাবে ভেবেছে, সন্ধ্যার পর মদ খেয়ে ভেবেছে তার একেবারে বিপরীতভাবে ! তৃতীয় দিন সকালে সর্বপ্রথম পদাৰ্পণ ঘটে ভুদেবের। বেলা দশটা নাগাদ। খবরের কাগজ পড়ার ফাকে ফঁাকে শূভ তখন কী ভাববে। আর কী ভাবে ভাববে সেই ভাবনায় ছটফট করেছিল। ভূদেব বলে, বঁচা গেল, তোমাকে এখানেই পেলাম। মায়াও তাই বলছিল, তুমি তো আর ছেলেমানুষ নাও যে অভিমান করে নিবুদ্দেশ হয়ে যাবে ! অভিমান করে নিবুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ? ভূদেব তবে ব্যাপার জেনেই এসেছে ! সুতরাং শূভ চুপ করে থাকে । ভূদেব বলে, জগদীশের সঙ্গে কী একটা গোলমাল হয়েছে শুনলাম ? কী যে বললে জগদীশ ভালো করে বুঝতেই পারলাম না ব্যাপারটা। নেশার ক্টোকে একটা কাণ্ড করে বসে এখন ভয়ে ভাবনায় এমন নার্ভাস হয়ে পড়েছে বেচারা ! শুভ সিধে কথায় নেমে আসে। বলে, বাবার কথা বাদ দিন। ফাস্ট ইয়ারে পড়বার সময় ঠিক এমনিভাবে একবার আমায় তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আজ বুঝতে পারছি সেবার বাবাকে ক্ষমা করে কী বোকামি করেছিলাম। সেবার বাবা পিছন থেকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন মাকে। এবার আপনাকে পাঠিয়েছে। ভূদেব সঙ্গে সঙ্গে বলে, শুভ তোমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষায় কি বাপ-মা বাতিল ? বাপ-মা ছাড়াই ছেলেমেয়ে গজায় ? সে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। তুমি জান না, তোমায় কোনোদিন বলিনি, বলা যেতও না। মায়াকে লাথি মেরে তাড়াবার ইচ্ছা! হয়নি কখনও, কিন্তু এই সেদিনও তার গালে একটা থাপ্নড় কষিয়ে দেবার সাধ হয়েছিল। মনে করে