পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ન્નોમોન્નતિ SI& লাঠি ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গিয়ে বিভা গড়িতে ওঠে। সুনীল রান্নাঘরে গিয়ে তার ফেলো-যাওয়া আটার পাতে বসে। রাত বেজেছে এগারোটা । আলপনা চট করে পরনের শাড়িটাই একটু ঘুরিয়ে পরে মুখে একটু পাউডার দিয়ে এক গ্লাস জল খেয়ে স্যান্ডেলটা পায়ে ঢুকিয়ে বাইরে যাচ্ছিল, কল্পনা তার হাত চেপে ধরে কুকুমের সুরে বলে, কেন মিছে গোলমাল করবি দিদি ? আমি যাবই। কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবে না। কল্পনা প্ৰাণপণ শক্তিতে শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে রেখে বলে, তোকে ঠেকাচ্ছি না তো ? তোর ইচ্ছে হলে তুই যাবি বইকী। যেখানে খুশি যাবি। এতরাত্রে হঠাৎ এভাবে গেলে নবীন চটে যাবে, ওর বাপ-মা সুবিধে পেয়ে যাবে বলে নবীনের মন ভেঙে দেবে। কাল সকালে ঠান্ডা মাথায় যাস। রাত কাটা মোটে কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। আলপনা কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে থেকে বলে, হাতে লাগছে দিদি। তোর তো ভীষণ জোর ! কল্পনা তার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, বাঃ, মায়ের পেটের বোনটি যাবে মরতে ? হাতে জোর হবে না ? হাতটা আমার কেলিয়ে গেছে। আলপনা। টনটন করছে। ছাই করছে। দাদার মতো চলতে ফিরতে কথা কইতে শিখেছি। তুমি। কর্ম, গ মিষ্টি সুরে বলে, কত খেটে দাদা আমাদের খাওয়াচ্ছে পরাচ্ছে বলো। নতুন টিউশনি নিয়েছে আমাদের খরচ চালাতে না পেরে। দাদা অবশ্য পাগলাটে কিন্তু সারাদিন খেটে যা পায় সব আমাদের পিছনে ঢালে তো ? বিয়ে করলে কী হত ভাব দিকি ! দাদা আবার বিযে করবে। কল্পনা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ায়। উনানের ছাই দিয়ে ঘষা চকচকে দাঁত। তাদের বিয়ের জন্য দাদা তোড়জোড় করেছে। অথচ নিজে সে কেন বিয়ে করতে চায় না। তার কোনো মানেই বোঝে না। बद्रमा ! বিয়ে হয় একটা ছেলে আর একটা মেয়ের। সুনীল মহাপুরুষ নয়, একটা রোজগেরে ছেলে। নিজে সে বিয়ে করবে না, বোনটাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেবে। পাশাপাশি ডাল আর ছেচকি দিয়ে বুটি খেতে খেতে কল্পনা বলে, পেট ভরে খা। মাথা ঠান্ডা থাকবে । দুটি ভাত দাও। মা কংকার দিয়ে বলে, ভাত ? জন্মিয়ে আনাগে যা চাল, ভাত বেঁধে খাওয়াবো। S সেদিন পড়াতে যাওয়া মাত্র নন্দ বলে, রবীন্দ্ৰকাব্য নিয়ে আপনার প্রবন্ধটা পড়লাম। সুন্দর লিখেছেন-সবাই খুব প্ৰশংসা করছে। আবার নিন্দোও করছে। সেটা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কতগুলি আপত্তিকর কথা বলেছেন বলে। রবীন্দ্ৰনাথ সম্পর্কে আপত্তিকর কথা ? রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আমি একটি কথাও বলিনি, তার কাব্যের সমালোচনা করেছি।