পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ન્નતિનિઓિ S\9V) দায়িত্ব তোমার। কী করতে হবে বলো, আমরা করব। নন্দা বলে, সাধে কী ভাগিদার করেছি ? আমি ভারী চালাক মেয়ে। এই সুযোগে তোমাকে দিয়ে করিয়ে নিতে না পারলে যে আর হবে না। আমি সেটা টের পাইনি ভাবিছ ? টের পেয়েই দায় চাপিয়েছি। সুনীল বলে, সে তো বুঝলাম। আমি এখন কোন দিক সামলাই ? নন্দা সঙ্গে সঙ্গে অস্নান বদনে বলে, কাগজটার দিক। অন্যদিক অন্য লোকেরা ঢের ঢ়োর সামলাচ্ছে, একটা খবরের কাগজের দিক কী সবাই সামলাতে পারে, না চেষ্টা করার সুযোগ পায় ? ভেবেচিস্তে সুনীল অঘোরের কাছে তিন মাসের ছুটির দরখাস্ত দাখিল করে। দরখাস্তে লেখে যে ছুটিটা তার পাওনা আছে, ব্যক্তিগত কারণে ছুটিটা এখন দরকার হয়েছে। মুখে কাগজের কথা সব জানায়। অঘোর বলে, চাকরি না ছেড়ে ছুটি নিচ্ছ এই জন্য যে কাগজ যদি নেহাত না দাঁড়ায়, চাকরিতে ফিরে আসবে। কাগজ একটু দাঁড়ালেই আর তোমায় আমি এ আপিসে দেখতে পাব না। সুনীল বলে, সেটা তো বুঝতেই পারছেন। মাইনে পাব দুমাসের। তারপর যে আমার কী অবস্থা হবে ভাবতে পারছি না। বাড়িতে সকলকে আধাপেটা খেতে হবে। অঘোরের আজ নতুন ভাব। হাসিমুখে সে বলে, আরো বোসো না। এই তো দোষ তোমাদের, একা একাই তোমাদের বীরত্ব, কারও সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটু কম বীর হতে তোমাদের মন চায় କୀ } সুনীল মনে মনে বলে, সেরেছে ! কিন্তু ক্লান্ত মুখে হাসি নিয়েই সে বসে। বাইরের ক্ষমতাশালী বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরই শুধু অঘোরের মুখোমুখি যে চেয়ারে বসার অধিকার, আজ নিয়ে দ্বিতীয়বার সে সেই চেয়ারে বসতে পায়। অঘোর বলে, আমি তোমায় বিশ্বাস করি, এতদিনে নিশ্চয় সেটা জেনেছি। তোমায় বিশ্বাস করা যায়-এটাই আমার কাছে তোমার একমাত্র গুণ। শূনে রাগ হচ্ছে না তো ? সুনীল বলে, রাগ ? এত বড়ো প্ৰশংসা করলেন, রাগ হবে কেন ? অঘোর বলে, বিশ্বাস করলে সকলে খুশি হয় না। মনে করে যে বোকা পেয়ে বাগাচ্ছি। তোমায় আমি সত্যি বিশ্বাস করি। আমি জানি তোমার কয়েকটা আদর্শ আছে নিয়মনীতি আছে, মরলেও তুমি তা ছাড়বে না। আমি তাই ভাবছিলাম কী, তুমি যখন এভাবে কাজটার দিকে ঝুকেছ, নিশ্চয় ওর মধ্যে সাবস্টানন্সিয়াল কিছু আছে। অঘোর একটা সিগার ধারায় । সিগার ধরানোটা তার চাল মাত্র, ধোঁয়া খেতে সে ভালোবাসে না। এই সিগারটাই তার চার-পাচদিন চলবে। খানিক সুনীলের মুখের ভাব লক্ষ করে অঘোর বলে, আমি যদি তোমার ওই কাগজটার পিছনে দাঁড়াই ? আমি যদি কাগজটা দাঁড় কবাতে যত টাকা দরকার ঢালতে রাজি হই ? তুমি এমনভাবে মেতেছি বলেই আমি কিন্তু মোটা টাকা এভাবে রিস্ক করতে বাজি হচ্ছি। সুনীল। সুনীল খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বলে, আপনি এ কাগজের পিছনে টাকা ঢালবেন ? এটা তো মুনাফার কাগজ নয়। মুনাফা ? তুমি এটা অন্যায় বললে সুনীল । মুনাফা তো চাদিক থেকে পাচ্ছিই-আমি কি মানুষ নাই ? বিভার পেছনে যে এত টাকা ঢালি, সেটা কি মুনাফার জন্য ? . কী শর্তে আপনি টাকা দেবেন ? হাজার চল্লিশ টাকা পেলেই আমি কাগজটাকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারব। অঘোর বোধ হয় এতটুকুও আশা করেনি। সে খুশি হয়ে বলে, তুমি সিগারেট ধরাও না, সিগারেট খাও। ও সব প্রেজুডিস আমার নেই। আমি খুব সোজাসুজি শর্তে তোমায় টাকা দিতে রাজি মানিক ৮ম-১৬