পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SG) সুনীল এই প্ৰথমবার সকাল থেকে সেজে-রাখা পান থেকে একটু মুখে দিয়ে, সিগারেটের একটা প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করে হাতে নিয়ে শাস্তভাবে বলে, আপনি এটা গায়ের জোরে বানিয়ে কথা বললেন। আপনাকে সেদিনও স্পষ্ট বলেছি, গাল দেওয়াটাই আমাদের কাগজের নীতিবিরুদ্ধ। গাল দিয়ে সমাজের রাষ্ট্রের রোগ সারানো যায় না, ববং নিজেদের খেলো হতে হয়। আমরা সমালোচনা করি। তাছাড়া, বিশেষভাবে আপনার ব্যাবসার বিরুদ্ধে তো কোনো কথা লেখা হয়নি ? আপনার ব্যক্তিগত ব্যাবসার সঙ্গে নয়, আপনাদের ব্যাবসা করার সিস্টেমটার সঙ্গেই আমাদের বিবাদ বেধেছে। আমরা সিস্টেমটার সমালোচনা করেছি, আপনার মনে হয়েছে। আপনাকে বেছে নিয়ে গাল দিয়েছে। বটে নাকি ? নিশ্চয়। আপনি তো শুনবেন না, বুঝবেন না। তোমাব মুখে একটু শুনি, বুঝবার চেষ্টা করি, কাল হয়তো কাগজে আমার নামে যাচ্ছেতাই গালাগালি ছাপিয়ে দেবে। সুনীল ফস করে সিগারেটটা এবার ধরিয়ে ফেলে। বলে, অত সস্তা কাগজ নয়। আমাদের। ধরুন, আপনার সঙ্গে বিজনেস প্রতিযোগিতায় নেমেছে আরেকজন, তাকে গাল দিয়ে আপনার কাছে কিছু টাকা-পয়সার আশা আমরা করব না। সিগাটে জোরে টান দিয়ে ধোঁয ছেড়ে সুনীল বলে, দরকার হলে আমরা আপনার সমালোচনাও করব। কাগজে চোরাবাজাবের বিবরণ দেব। তিনি কলম, চারের কলমে দেখিয়ে দেব আপনি কেমন ধরনের চোরাকারবার করেন। সুনীল আবার জোরে সিগারেট টেনে বলে, আমি জেনে গেছি, এ কাগজটা বন্ধ করার জন্য আপনি কোথায় কোথায় কাব। কার কাছে ছুটোছুটি করেছেন। আমার কিছুই জানতে বাকি নেই। টাকা দিয়ে কাগজটা কিনতে না পারার রাগে আপনি আমাদেব সঙ্গে শত্ৰুতা করছেন। শত্ৰুতা আমিও কবিতে পারি, কিন্তু আপনার আপিসে কাজ করে যে সব সিক্রেট জেনেছি, সে সব কাজে লাগানো হীনতা হবে, তাই চুপ করে আছি। ক্ষতি আমাদের বিশেষ কিছু করতে পারবেন না। গায়ের জ্বালায় আপনি বাঁদর নাচছেন খেলোয়াড়দেব হাতে । বাঁদর নাচছে ! অঘোর বাঁদর নাচছে ! এই সেদিন পর্যন্ত অঘোরের নীতিবর্জিত মুনাফা নীতির চোরা প্রক্রিয়াব ব্যাবসায়ে সক্রিয় অংশ নেবার জন্য মাসিক সাড়ে তিনশো টাকা পেয়ে এসেছে সুনীল, আজ সে সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাঁকা দেড় কলম সম্পাদকীয় প্ৰবন্ধ লিখছে। টেবিলের এক কোণে পিছনে বসে মায়ার কিন্তু মনে হয় একটু বোকামি করছে। সুনীল, সস্তা বাহাদুরি করার ঝোঁকে অঘোরের মধ্যে অকারণে শত্ৰুতা সৃষ্টি করছে। অঘোরের মতো খেলোয়াড় খেলোয়াড়দের হাতে বাঁদর নাচছে, এ কথাও মুখের উপর বলছে জোর গলায়। আরও বেশি ব্যক্তিগত আকেশ জগবে অঘোরের। অঘোরের কথাবাত শুনলেই বুঝতে পাবা যায় যে সে খবরের কাগজটা সম্পর্কে দাঁও মারার ফিকিরে এসেছে। আজ কাজ হাসিল না হলেও কিছু আসে যায় না। নিজের আপিসের বেতনভোগী কর্মচারী সুনীলের কাছে এভাবে তার নত হয়ে আসার মানেই হল এই যে সে জানে সুনীলের ব্যাবসাবুদ্ধির মধ্যে ছেলেমানুষির ভেজাল আছে অনেকখানি। নীতির জন্য আদর্শের জন্য সে অনেক কিছু বাস্তব সুবিধা বলি দিয়ে মনে করতে পারে যে খুব লাভ করলাম, জিতে গেলাম। ছেলেমানুষ আদর্শবাদীদের ঘাড় ভাঙবার জন্য অনেক পাকা পাকা লোক যে চারিদিকে ওত পেতে থাকে, তাও অঘোরের অজানা নেই। এইটাই তার আসল ভয় সুনীল সম্পর্কে। তার আপিসে