পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

અત્રિનિ G আমি তা বলবাও না। তোমার বাড়ি এলে পেটে জায়গা নিয়েই আসি। না খেলে যে ছাড়বে। না এটা আমার জানাই আছে। বিভা খুশি হয়। তার স্নান মুখে সানন্দ হাসির আভাস পর্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু অল্পক্ষণেই মিলিয়ে যায় তার হাসিখুশি ভাব। বলে, তোমায় সাবধান করে দিতে ডেকেছি। বাবা তোমাকে বিপদে ফেলবার চেষ্টা করবে। মায়ার ভবিষ্যদ্বাণী সুনীলের মনে পড়ে যায়। মায়া ঠিকই ধরেছিল যে তার সঙ্গে কথা বলে অঘোর যেহেতু টের পয়েছে যে, এ কাগজে মাথা গলাবার সুযোগ সে পাবে না, সেই হেতু এবার থেকে অঘোর তাকে মুশকিলে ফেলবার চেষ্টা বিশেষভাবে আরম্ভ করবে। বিভা বলে, টাকা টাকা করে নাকি পাগল হয়েছ। অথচ বাবা টাকা দিলে নেবে না, এইভাবে তুমি শত্ৰুতা করছি বাবার সঙ্গে। বাবাও তাই শত্ৰতা করবে। পরম তৃপ্তির সঙ্গে খাবার খেতে খেতে সুনীল নিশ্চিতভাবেই বলে, বুঝতে পারছি। কী আর कीं यदि ! তোমার সত্যি খুব টাকার দরকার ? টাকার চিস্তায় পাগল হতে বসেছি। টাকা জোগাড় করতে না পারলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। টাকার চেষ্টা করতে নেমে সব জায়গায় ওই এক রকম ব্যাপার দেখছি। টাকা দিয়ে কাগজটা বাগানোর উদ্দেশ্যে ছাড়া কেউ টাকা দিতে রাজি নয়। সুনীল ক্ষোভের হাসি হাসে। সমস্যাটা দাঁড়িয়ে গেছে খুব সোজা। কাগজটার জন্য যাদের দরদ আছে, তাদের নেই টাকা, আর যাদের টাকা আছে। কাগজটার নীতির জন্য তাদের নেই। মাথাব্যথা।। বিভা বলে, তোমায় বলতে সাহস হয় না-আমি লুকিয়ে হাজার পাঁচশোক টাকা দিলে নেবে ? অত টাকা কোথায় পাবে ? টাকা আমার নামে জমা আছে। অঘোরবাবু টের পেয়ে যাবেন। পরে টের পেলে আর কী হবে ? একটু রাগারগি করবে-বাস। মেরে তো আর ফেলতে পারবে না নিজের একটা মেয়েকে। সুনীল স্থিরদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে থাকে। বিভা প্রশ্ন করে, কী ভাবিছ ? ভাবছি। তোমার টাকা আর তোমার বাবার টাকায় তফাত কী ? তফাত নেই ? এটা আমার নিজের টাকা। তোমার বাবাই তো তোমাকে দিয়েছেন। দিয়েছেন বলেই তো। ওটা আমার টাকা। নইলে দেওয়ার কী মনে হয় ? এ টাকায় কেবল আমার অধিকার। সুনীল একটু হেসে বলে, সে তো বুঝলাম, মেয়ে বলেই তোমার অধিকার। আমি কোন অধিকারে তোমার টাকা নেব ? বিভা সঙ্গে সঙ্গে বলে, তুমি তো নিচ্ছ না ! আমি তোমাকে টাকা দেব বলছি নাকি ? তোমায় কেন টাকা দিতে চাইব ! তোমার সংসারে কত টানাটানি, কোনোদিন বলেছি। পাঁচটা টাকা নাও ? সুনীল বলে, বললে আমাকে অপমান করা হবে তাই বলনি, নইলে মনে মনে ইচ্ছা কী আর হত না। বড়োলোকের মেয়ে হবার জ্বালা আমিও খানিক বুঝি। কোনোদিন সাহস করে একটা জিনিস কখনও আমার ভাইবোনকে প্রেজেন্ট দিতে পােরনি।