পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

❖ዘጫዘዏዘኾቑ Ses দুজনে সারারাত ঘুমিয়েছি আর ছটফট করেছি। আর ভেবেছি। তুমি আমাদের ক্ষতি করবে না জানি, কিন্তু কী করতে চাইছ তা তো জানিনে। সুনীল বলে, রাত্রে না ঘুমিয়েও মুখ তো বেশ তাজা দেখাচ্ছে ! বিভা বলে, আমার মুখে এত লোম, প্ৰথম বয়সে পুরুষ ছেলের যেমন গোফদাড়ি গজায়। তবু তুমি বুঝতে পার আমার মনের ভাব ? সুনীল বলে, তা খানিকটা বুঝতে পারি বইকী। অনেকদিন থেকে দেখে আসছি তো, খোঁড়া পা, মুখের লোম, বাপের টাকার অভিশাপ নিয়েও তুমি মানুষের মতো বাঁচার জন্য লড়াই করছি। যারা এ রকম লড়াই করে তাদের বিশেষ এক ধরনের সরলতা থাকে, মনে কোনো ভাব জোরালো হলে মুখে তার ছাপ পড়ে। রাতে না ঘুমোলে কী হবে মনে খুব উৎসাহ বোধ করছ, মুখখানা। তাই তাজা 〔环屯坛再 বিভা হেসে বলে, তা ঠিক। শুধু দুশ্চিস্তায় তো নয়, বেশি আনন্দেও মানুষের ঘুম আসে না। আমার এত উৎসাহ কেন, আনন্দ কেন জানো ? জানি। সত্যি জানো ? জানি বইকী। তোমার সবচেয়ে বড়ো দুর্ভাবনা শেষ হয়েছে। অঘোরবাবু আর তোমার বিয়ের চেষ্টাও করবেন না, আমার পিছনেও লাগবেন না। মনে মনে তুমি খালি নিশ্বাস ফেলাছ আর ভাবছি, বাকবা, বেঁচেছি। ! বিভা যেন হাসবে না। কঁদিবে ভেবে পায় না। খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে থেকে সে বলে, বাবার চেয়ে তোমার অনেক বেশি বুদ্ধি-গভীর বলো, চোখা বলো, সবদিক দিয়ে। কিন্তু বাবা আর তোমার শত্ৰুতা করবে না। এটা কী করে বুঝলে ? সুনীল বলে, ওঁর সঙ্গে ঠোক্কর লাগলেই তুমি আমার কাছে ছুটে যাও, পরামর্শ চাও। সেদিন আমার পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করলে, বিয়ের ব্যবস্থা পাকা করতেই বাড়ি ছেড়ে আমার ওখানে গিয়ে উঠলে। অঘোরবাবুর কী আর বুঝতে বাকি আছে যে আমায় ঘা দিলে সেটা তোমার গায়ে লাগবে ? বিভা খুশির হাসি হাসে। বলে, বাবার চেয়ে তোমার বুদ্ধিই বেশি নয়, তুমি ঢের বেশি চালাক। বাবা সোজাসুজি তোমাকে বাগে আনতে চেয়েছিল, তুমি আমাকে দিয়ে বাবাকে কাবু করেছ। আমার টাকা ধার নেবে। তো ? সুনীল অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল, জবাব দেয় না। কী ভাবিছ ? সুনীল বলে, ভাবছি খুব গুরুতর কথা। টাকার জন্য আমি যদি তোমায় বিয়ে করতে চাই, তুমি রাজি হবে ? বিভা হা করে তাকিয়ে থাকে। সুনীল বলে, তামাশা করছি না। ক-দিন ধরে কথাটা ভাবছিলাম। সোজাসুজি বলি, প্ৰেম আমার কাছে তুমি পাবে না, ওটা আমার ধাতেই আসে না। তবে অন্য স্ত্রীরা যেমন আদর যত্ন পায় স্নেহ-মমতা পায় সে সব তেমনি পাবে। তুমি টাকার জন্য বিয়ে করবে ? দোষ কী ? অন্যে তোমায় বিয়ে করলে টাকা পেত, আমিও পাব। তুমি এমনিই টাকা দিতে চাইছিলে, কিন্তু এমনি তো টাকা নিতে পারি না। বিয়ে হলে তোমার টাকায় আমার অধিকার জন্মাবে।