পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sreso মানিক রচনাসমগ্ৰ ছাঁটাই হয়ে হয়ে দিন দিন তাদের সংখ্যা যখন বাড়ছে ! ছাত্র সুরঞ্জন রাতারাতি চাকরি পেয়ে বদলে না গেলেও তার একটা সাধ জেগেছে ভাবিকি ভদ্রলোক হিসাবে পবিগণিত হবার জন্য। ধীরে ধীরে অমায়িকভাবে চারিদিকে একটা সামঞ্জস্য রেখে সে মতামত বলার চেষ্টা করে। পরমেশ্বর বলে, তুমিও যে আমায় খোঁচা দিয়ে বসলে হে রুশূন ! সে কী ঈশ্বরদা ? যা কিছু আনন্দ দেয় সব তুমি বর্জন করা উচিত বললে। দেশের অবস্থা বড়ো খারাপ। আমিও আনন্দ দিই, আমিও তোমার মতে বর্জনীয়। আমি বলছি বাজে আমোদ-প্রমোদের কথা তাছাড়া লোকে পাবে কোথা ? কে দিচ্ছে ? সিনেমা খারাপ, থিয়েটাব খারাপ, সবই খারাপভালো যে আমি তা কিন্তু বলছি না ভাই। কিন্তু যা আছে তাই নিয়ে তো একটু ভুলে-টুলে থাকবে মানুষ-যা নেই তা পাবে কোথা ?--তাহলে সব ছেড়ে দিয়ে তোমাদের ওই মিসেস দাস না কে, ওঁর মতো মেজাজ করে দিন কাটাতে হয় ! আদিনাথ বলে, বড়ো কষ্ট করে চালাতে হয়। মিসেস দাসকে। পরমেশ্বর বলে, তাই বলে মেজাজ চড়িয়ে বেখে লাভটা কী ? কষ্ট তাতে কিছু কম হবে ? দেশের লোক খেতে পাচ্ছে না বলে লোকে সিনেমা দেখবে না-এ কথার মানে চোরের উপর বাগ করে সেই কাজটা করা। গাল দেওয়া উচিত সিনেমা যারা করছে। দেশেব লোকেব। এত কষ্ট, ব্যাটাবা কোথায় একটু ভালো সিনেমা করে মানুষকে আনন্দ দেবে-তা নয়, স্রেফ বিষ দিয়ে পয়সা নিয়ে ঠিকাচ্ছে ! শশধর বলে, বিষ খায় কেন দেশের লোক ! পরমেশ্বর বলে, বিষ খেলে যে নেশা হয় রে ভাই ! অনেকে হেসে ফেলে। শশধর বুমাল দিয়ে মুখ মোছে। • সে নামকরা নেশাখের। মদটা তার প্রধান নেশা হলেও আরও তিন-চার্যরকম নেশা তাব আছে। অবস্থা ভালেই ছিল, চাকরিও করে ভালোই-শুধু নেশায় তাকে কাহিল করে ছেড়েছে। শরীব এবং পয়সা দুদিক দিয়েই ! প্রৌঢ়বিয়সি রবীন্দ্র সরকার বলে, যাক, যাক। আপনার দেশের খবর কী ঈশ্বরবাবু ? আমার দেশ ? আমার দেশ তো এটাই ! আগে যেটা দেশ ছিল। আপনার ভাই নাকি চলে আসবেন সবাইকে নিয়ে ? আসবে। আসবে তো করছে-এখন কবে হঠাৎ এসেই পড়ে ভাবছি। ভাবনার কী ? ভাবনা নয় ? দুর্ভাবনায় রাতে ঘুম হয় না। দাদা। সকলকে ঘাড়ে করে এনে দিয়ে শ্ৰীমান নিজে নিশ্চয় ফিরে যাবে। দেশে জমিজমা না দেখলে খাবে কী ? বোঝাটি সব কাজেই চেপে থাকবে আমারই ঘাড়ে ! সংসারটি কী সোজা ভায়া ? স্ত্রী, দুটি, ছেলে দুটি মেয়ে ! বড়ো ছেলেটি হােস্টেলে থেকে কলেজে পড়ে, বড়ো মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে,-নইলে কী যে হাল হত। আমার ! আচ্ছা। আপনি দেশে যান না কেন ? Gas Get ধীরেন বলে, সে তো অল্পদিনের কথা। আগে যখন দুটাে দেশ একটা ছিল তখনও তো আপনাকে বিশেষ যেতে দেখিনি !