পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SStr মানিক রচনাসমগ্ৰ গণেশ একটু হাসে। দাঁতগুলি ঝকঝকে। হাসিটা পঙ্কজের বড়ো ভালো লাগে। তার চোখে সেনাবা চশমা, শখের হওয়াই সম্ভব। সে বলে, আপনি বরং এক কাজ করুন না ? ওই আংটার সঙ্গে নিজেকে বেঁধে ফেলুন। সবে বারোটা বেজেছে, ঘুম ঠেকাতে ঠেকাতে কখন চোখ লেগে যাবে, দুর্ঘটনা ঘটে যাবে একটা। প্ৰস্তাবটা মন্দ নয়। কিন্তু সমস্যা হল দড়ি পায় কোথা, নিজেকে আংটার সঙ্গে বাঁধে। কী দিয়ে। কেঁচটা খুলবে কি না ভাবছে, গণেশ ডেকে বলে, মা, আলগা চাদরটা ষ্টুড়ে দাও তো ? মেয়েদের জায়গা থেকে একজন প্রৌঢ়বিয়সি বিধবা বলে, চাদর আবার কী হবে ? দ্যাখ তো বেলা চাদরটা গেল কই। বেলাই চাদরটা পেতে বসেছিল। চাদরটা তুলে তাল পাকিয়ে ভাইয়ের দিকে ছুড়ে দিয়ে ঈর্ষা মেশানো অনুযোগের সঙ্গে কিশোরী মেয়েটি বলে, চাদরটাও তোমার চাই ? ওখানে পাতবে কোথায় ? দেখা গেল, কোমরে জড়িয়ে আংটায় চাদর বাঁধা যায় না। এক মুহুর্ত একটু অপ্রতিভ হযে থেকে ছেলেটি চাদর লম্বা করে তাদের দুজনের কোমরে জড়িয়ে বেঁধে দেয়। তাব পড়ার ভয় নেইপঙ্কজের এই নিরাপত্তাটুকুর ব্যবস্থা করে দিতে পেরে ভারী খুশি মনে হয় তাকে। gख्5ाभान्न नाका रुँको ? নাম ? অামার নাম গণেশ । নাম বলতে মুহুর্তের ইতস্তত ভাব একটু খাপছাড়া মনে হয়। তারাও দেশ ছেড়ে বাড়িঘর ছেড়ে কলকাতায় চলেছে। এক রকম নিবুদ্দেশ যাত্রা, কোথায় উঠবে। কোথায় থাকবে কী করবে কিছুই ঠিক নেই। এবং পরিবারটির অভিভাবক হয়ে সঙ্গে চলেছে এই ছেলেমানুষ গণেশ। আমীয়স্বজন কেউ নেই কলকাতায় ? আছেন বইকী। একটি পিসে, আর একটি দূরসম্পর্কের কাকা। মাকে স্পষ্ট লিখে দিয়েছেন দুজনে তাদেরও বাড়িতে তিলধারণের ঠাই নেই। লিখে দেওয়া সত্ত্বেও আমরা অবশ্য হাজির হব। তারপর কী করবে ? যেমন তেমন একটা বাসা খুঁজে নিতে হবে। সেটাই তো সমস্যা। বাস খুঁজতে ক-মাস লেগে যাবে কে বলতে পারে ? গণেশ চুপ করে থাকে। চুপ করে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। ব্যাপারটা আরেকবার ধারণা করার চেষ্টা করে পঙ্কজ। শুধু গণেশেরা নয়, গাড়ির বোধ হয় অধিকাংশ পরিবারই এমনই অনিশ্চিতের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। এবং গাড়িও আজ এই একটি চলছে না। কলকাতার দিকে। গা ব্যথা হয়ে গেছে, পা দুটাে আড়ষ্ট লাগছে। ধীরে ধীরে চোখ বুজে কষ্টটা ভুলবার চেষ্টা করে। মনটা আবার গভীরভাবে নাড়া খেয়েছে। কী বিশৃঙ্খল অনিশ্চিত অবস্থা দেশে। মানুষের যেন খেয়েপরে সুখে-শাস্তিতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই, চাবিদিকে সব লন্ডভন্ড হয়ে থাকতেই হবে, দুঃখ দুৰ্দশা চরমে উঠতেই হবে। পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ বেঁধে বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানের আবিষ্কার ভয়ংকর